শামীম আহমেদ এর জন্ম ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার চিলকুট গ্রামে। শামীম আহমেদ ২০০০ সালে ঢাকার গুলশানে তোশিবা কোম্পানিতে আইটি বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৬ সাল থেকে আছেন যমুনা ব্যাংক এ। বর্তমানে যমুনা ব্যাংক এ ফার্স্ট এসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। বর্তমানে শামীম আহমেদ স্ত্রী ও ২ কন্যা সহ ঢাকার আদাবরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে শামীম আহমেদ ৩য়। বাবা ডা: মো: সিদ্দিকুর রহমান, মা রওশন আরা বেগম। বাবা ছিলেন সরকারী চাকুরীজীবী। শামীম আহমেদ এর বর্তমানে পৈত্রিক নিবাস ঢাকার উত্তরায়। মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় অযত্ন-অবহেলায় রাস্তা ঘাটে পড়ে থাকা ঠিকানাহীন মানুষকে নিজ উদ্যোগে হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে, সেবা শুশ্রুষার মাধ্যমে ভালো করে ও ঠিকানা খুঁজে বের করে স্ব স্ব বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার অন্যান্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শামীম আহমেদ ও তার বন্ধুরা। শামীম আহমেদ চিন্তা করেন দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে।
কচিপাতা: আপনার জীবনের স্মরণীয় কোন মুহূর্ত।
শামীম আহমেদ: আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন আমার একটা স্বপ্ন ছিল আমার মাকে বিমানে চড়াবো। তাই অল্প অল্প টাকা জমিয়ে কোন এক ঈদের আগে আমি আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া থেকে ঢাকায় আসি এবং মতিঝিলে বাংলাদেশ বিমানে অফিসে এসে ঢাকা-টু-সিলেটের একটা ওয়ান ওয়ে টিকেট ক্রয় করি। মূল্য সম্ভবত ১৫০০ টাকা ছিল, টিকেট কেটে আবার ট্রেনে চলে গেলাম নিজ বাড়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। রাতের বেলায় আম্মাকে বললাম “আম্মা আপনাকে একটা ঈদের গিফ্ট দিব।” তখন আম্মা বললেন আমাকে কোন কিছু দিতে হবে না। তুমি যে বলেছ, তাতেই আমি খুশি। তারপরে বললাম আপনি চোখ বন্ধ করেন। আপনার জন্য একটা ঈদের গিফ্ট নিয়ে এসেছি। তখন আম্মা চোখ বন্ধ করলেন। আমি আমার মায়ের হাতে বিমানের টিকেট দিয়ে বললাম এইবার চোখ খোলেন। উনি চোখ খুলে কিছুটা আশ্চার্য হয়ে বললেন, এটা কি? আমি বললাম এইটা একটা বিমানের টিকেট। আমার এই ক্ষুদ্র গিফ্টটা পেয়ে সাথে সাথে কেঁদে ফেললেন এবং বললেন “আমি তোমার গিফ্ট পাইছি, তবে আমি বিমানে উঠতে ভয় পাই”। তুমি টিকেটটা ফেরত দিয়ে দাও। পরে আমি আবার ঢাকায় বিমানের অফিসে এসে টিকেটটা কিছু ক্ষতিপুরণ দিয়ে ফেরত দিলাম। এ ঘটনাটি আমার জীবনে অনেক স্মরণীয় একটা ঘটনা।
কচিপাতা: আপনার জীবনে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে কার কার অবদান বেশী বলে মনে করেন?
শামীম আহমেদ: আমার জীবনে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে আমার মা’র অবদান সবচেয়ে বেশী। আমার মা’র কারণে আজ আমি এইখানে আসতে পেরেছি। তাছাড়া বাবার অবদানও ছিল অনেক।
কচিপাতা: এ পর্যন্ত কতজন রোগীকে সুস্থ করে তোলেন ?
শামীম আহমেদ: অন্তর, আদুরী, রানী, কোহিনূর ও সাহিদা এই ৫জন এখন সুস্থ ও নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়েছে। পারুলীর নামের আরেকটা মেয়ের পরিবারে খোঁজ না পাওয়ায় আমরা পারুলীর ভরণ পোষণ নিজেদের ব্যাক্তিগত অর্থায়নে চালিয়ে যাচ্ছি। আমি ঢাকা থেকে মাসে মাসে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়া মেয়েগুলোর জন্য ঔষধগুলো পাঠিয়ে দেই।
তাছাড়া সামাজিক মর্যাদার কথা ভেবে নাম পরিচয় গোপন রেখে আরো ১৭-২০জন মানসিক রোগীকে চিকিৎসার ব্যাপারে সাহায্য ও পরামর্শ প্রদান করেছি।
শামীম আহমেদের সহধর্মিনী আফরিন জাহান এর অনুভূতি
কচিপাতা : আপনার স্বামীর এই কাজ নিয়ে আপনার মতামত কি বা আপনি কিভাবে দেখেন বিষয়টিকে?
আফরিন জাহান : প্রথমবার যখন আমার স্বামী বান্দরবান থেকে ফোন করে যে একটি মেয়ে, যে কিনা মানসিক ভারসাম্যহীন, রাস্তায় থাকে তাকে ঢাকা নিয়ে আসতে চায়। আমি তখন বললাম যে হ্যাঁ নিয়ে আসো এবং তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে বললে আমি তাতে মত দেই।
কচিপাতা : আপনার কাছে মনে হল না এটা একটা ঝামেলা, কিছু টাকা দিয়ে দাও এত দায়িত্ব নেয়ার দরকার নেই এ জাতীয় কোন কথা?
আফরিন জাহান : না আমার মনে হয়নি। একটিবারের জন্য একথা মনে আসেনি। বরং আমার কাছে বিষয়টা খুব চিন্তার উদ্রেগ করল যে, আমরা কি সুন্দর বাসায় ঘুমাই; শীতের রাতে কম্বলের নিচে থাকি, অথচ একটি মেয়ে তার নিরাপত্তার কথা মাথায় নেই, পোশাক ও খাবারের নিশ্চয়তা নেই। আল্লাহ না করুক আমি যদি এমন অবস্থায় থাকতাম আমার কেমন লাগত। ও যদি আমার মেয়ে হত? দোয়া করি কারো সন্তান যেন কখনো এমন পরিস্থিতিতে না পড়ে।
কচিপাতা : মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েগুলো সুস্থ হওয়ার পর যখন নিজ বাড়িতে ফেরত চলে যায় তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়?
আফরিন জাহান : প্রথমত খুশি লাগে যে তারা তাদের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। আবার মন খারাপ হয়। তাদের জন্য মায়া লাগে। আমাদের বাসার সামনে ওদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঝে মাঝে ওরা বাসায় আসে অথবা আমি ওই বাসায় যাই। ওদের সাথে কথাবার্তা বলি। আমার বাসার বারান্দা থেকে ওদের দেখা যায়, তখন বারান্দা থেকেই ওদের সাথে কথা বলি। আমার সময়টা ভালো কাটে। একরকম ভালো লাগা তৈরি হয়। এমন কাজের আমি কিছুটা হলেও অংশীদার হতে পেরে আনন্দ পাই।
কচিপাতা: যতটুকু জানি ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার কাজগুলো প্রচার পাচ্ছে। সে বিষয়ে জানতে চাই।
শামীম আহমেদ : ফেসবুকের মাধ্যমে আমি আমার কাজের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাজগুলো দেখে যেন অন্যরাও অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এই মানুষগুলোকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। একজন ভিক্ষুক আমাদের কাছে টাকা অথবা কিছু খাবার চাইতে পারে কিন্তু একজন মানসিক ভারসাম্যহীন (আমরা যাকে পাগল বলি) কিছু চাইতে পারে না।
কচিপাতা: আপনার এই কাজে কারা সহযোগিতা করছেন বা পাশে থেকে আপনাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন?
শামীম আহমেদ: আমার স্ত্রী আফরিন জাহান আমার এই মানবিক কাজে প্রথম থেকেই সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। আমার জার্মানী ফেসবুক বন্ধু অনিতা লেহনার আমাকে কিছু গাইডলাইন দেন শুরুর দিকে। পরবর্তীতে আমার বন্ধু ও অফিস সহকর্মী আলী সাব্বির ও তার স্ত্রী কায়েনাত আলী আমার এই কাজে যুক্ত হন। পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তারপর আমার অফিস কলিগ শফিকুল ইসলাম সহ বেশকিছু ফেসবুক বন্ধু আমার এই কাজে মানসিক, লজিস্টিক সাপোর্ট ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আমার এই কাজে আমার বাবা মা’র অনুপ্রেরণা আছে।
ধন্যবাদ জানাই জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সকল ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণকে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলো সুস্থ হয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারছে। ধন্যবাদ জানাই বেতন ভুক্ত জরিনা বেগমকে যিনি রাস্তায় পড়ে থাকা এই সকল মানুষগুলোকে মাতৃস্নেহে লালন পালন করে তাদেরকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সর্বদা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
মানবিক ও সামাজিক এই কাজগুলো শুধু সরকারের একার কাজ নয়, আমাদের সবাইকে এই কাজে আরো এগিয়ে আসতে হবে।
আমরা যদি সবাই রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষের পাশে এগিয়ে আসি তাহলে হয়তো একদিন একজন মানুষও রাস্তায় পড়ে থাকবে না।
কচিপাতা: মানসিক ভারসাম্যহীনদের নিয়ে কাজ করার শুরুর গল্প যদি বলেন?
শামীম আহমেদ : ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখে বান্দরবান জেলার থানচিতে কয়েকজন অফিস সহকর্মীদের সাথে বেড়াতে গিয়েছিলাম। থানচি বাজারে পৌঁছানোর পরে হঠাৎ করে দেখতে পাই মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মেয়ে গাছের নিচে বসে আছে। ২দিন পর থানচি থেকে আবার ঢাকায় চলে আসি। আসার সময়ও মেয়েটাকে ওই একই গাছের নিচে বসে থাকতে দেখি। মেয়েটিকে দেখে আমার খুব মায়া হলো। তারপর, ঢাকায় এসে প্ল্যান করি, যে কিভাবে মেয়েটিকে থানচি থেকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করে সুস্থ করা যায়। বিষয়টি আমার সহকর্মী “আলী সাব্বির” এর সাথে প্রথমে আলোচনা করি এবং সে আমার সাথে একসাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে আলী সাব্বিরের আরেক বন্ধু “হাসান ফরহাদ আজাদ” আমাদের সাথে যোগ দেয়। সম্পূর্ণ এই ব্যাপারটিতে আমার অন্যান্য কয়েকজন সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধব বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তারপর শুরু হলো আমাদের যাত্রা।
আমি ইন্টারনেট থেকে থানচি ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান ও আরো কিছু ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার জোগাড় করি। তারপর ২০১৫ সালের মার্চ মাসের ০৫ তারিখে একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকা থেকে থানচির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। থানচি গিয়ে, আমরা মেয়েটিকে রাস্তার পাশে শুধুমাত্র একটি কম্বল পরিহিত অবস্থায় বসে থাকতে দেখি। ঢাকা থেকে মেয়েটির জন্য কিছু জামা নিয়েছিলাম। পরে স্থানীয় একজন মহিলার সাহায্যে মেয়েটিকে গোসল করিয়ে, জট বাধা চুল কেটে ফেলে দিয়ে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা ও খাবার দাবার দিয়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত করা হয়। মার্চের ০৭ তারিখে মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে এসে শেরে বাংলা নগর এ অবস্থিত “জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে” ভর্তি করাই। হাসপাতালে ভর্তির সময় আমি মেয়েটির নাম রাখি “অন্তর”। মেয়েটিকে সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করার জন্য আমরা জরিনা বেগমকে বেতনভিত্তিক নিয়োগ দেই।
১ মাস ০৮ দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর, ২০১৫ সালের ১৫ই এপ্রিল, তারিখে মেয়েটিকে আমার বাসার বিপরীতে অবস্থিত আদাবরে ১৬ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে উপরে উল্লেখিত মহিলার বাসায় নিয়ে আসি। এই বাসায় রেখেই আমরা মেয়েটিকে সেবা ও কিছু মানসিক থেরাপী দেই। পাশাপাশি একটি ভালো পরিবেশ দিয়ে তার সাথে বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলার চেষ্টা করি, যাতে সে তার অতীত ইতিহাস ও পরিবারের কিছু তথ্য মনে করতে পারে। মাসখানিক চেষ্টার পর, সে ধীরে ধীরে কিছু তথ্য দিতে থাকে। এক পর্যায়ে সে, বলে তার বাড়ি চান্দুরা বাজার ও ডাকবাংলা। এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছিলো না। পরে খোঁজ নিয়ে ধারনা করতে পারলাম যে, জায়গাটি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বিজয়নগর থানায়। গত ২৯শে এপ্রিল, ২০১৫ তারিখে আমরা ৩জন বন্ধু একটি প্রাইভেট কারে চান্দুরা বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হই। সেখানে গিয়ে প্রথমে বিজয়নগর থানায় বিষয়টি অবহিত করি, চান্দুরা বাজারে বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং করি। ওই এলাকায় পোস্টারিং এর পরে তাৎক্ষণিক আমরা তার পরিবারের খোঁজ পেলাম না। তারও কয়েকদিন পরে, মেয়েটি আরেকটি গ্রামের নাম “দাউরিয়া” বলে। সে বলে যে, সেখানেই তার বাড়ি। মানবিক বিবেকের তাড়নায় নিঃস্বার্থভাবে অসহায় মেয়েটির পেছনে কাজ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ও পোস্টারিং এর মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চান্দুরা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শামীমুল হক চৌধুরী ও শাহজাদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকনের মাধ্যমে এক পর্যায়ে মেয়েটির ঠিকানা বের কর হয়। মেয়েটির বর্তমানে ২ ছেলে, ১ মেয়ে ও স্বামী আছে। তাঁর আসল নাম শিউলী রানী সরকার (২৫)। সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দাউরিয়া গ্রামের সতীর্থ সরকারের মেয়ে। এই শিউলি আজ থেকে পাঁচ বছর আগে স্বামী ফালান সরকার, ছেলে সাগর, হৃদয় ও মেয়ে লিপির কাছ থেকে হারিয়ে যায়। ২০১৫ সালের ২২শে মে তারিখে মেয়েটির স্বামী “ফালান”, ছেলে “সাগর”, বড়ভাই “তপন সরকার” ও একজন খালাতো ভাইসহ মোট ৪জন আমার আদাবরের বাসায় ঢাকায় এসে মেয়েটিকে সনাক্ত করে।
পরবর্তীতে সরাইল উপজেলা মিলনায়তনে ব্যক্তি উদ্যোগে মানবিক ও বিরলধর্মী এক অনুষ্ঠানের অয়োজনের মাধ্যমে অন্তরকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আনুষ্ঠানে স্বামী ফালান সরকার নতুন করে সিঁদুর পরিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় আমরা সবাই মিলে অন্তর নামের সেই শিউলি রানী সরকারকে একটি সেলাই মেশিন, নগদ টাকা ও সোনার নাকফুল প্রদান করি।
কচিপাতা : অন্তর (শিউলী রানী সরকার) এর বৃদ্ধা মায়ের চোখের অপারেশন করালেন সেই বিষয়টা জানতে চাই। শামীম আহমেদ : ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দাউরিয়া গ্রামের শিউলী রানী সরকার (অন্তর) এর বৃদ্ধা মা কমলা রানী সরকারের চোখের অপারেশন করালাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর হাসপাতালে। শিউলী রানী সরকার পাঁচ বছর নিখোঁজ থাকার কারণে তার বৃদ্ধা মা কমলা রানী সরকার কাঁদতে কাঁদতে চোখের আলো হারিয়ে ফেলেছেন। বহুদিন পর আপন সন্তানকে ফিরে পেয়েও মমতাময়ী মা নিজ চোখে দেখতে না পারার বেদনাটি আমাদের কাছে বলেন। আমরা ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইয়ামলী খানের মাধ্যমে ষাটোর্ধ্ব কমলা রানী সরকারের চোখের অপারেশন করাই।
অপারেশনের পর অন্তরের মা কমলা রানী সরকার বলেন, “আমার চোখ দিয়া সবার আগে সেই শামীম বাবারে দেখতাম চাই, যে আমার মাইয়ারে আমার কাছে ফিরাইয়া দেওনের পর আবার আমার চোখের বাত্তিডা ফিরাইয়া দিসে”।
কচিপাতা: আদূরীর ঘটনাটা শুনতে চাই।
শামীম আহমেদ : ঢাকার পল্টনস্থ আমার কর্মস্থলে আসা যাওয়ার পথে ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার পল্টন মোড়ে রাস্তার পাশে ছেঁড়া কাপড়ে জড়ানো মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মেয়েটিকে দেখতে পাই। কিছু টাকা ও খাবার কিনে দেই। পরদিন অফিসের সহকর্মী ব্যাংকার আলী সাব্বিরের সাথে পরামর্শ করে মেয়েটিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করতে পল্টন মডেল থানা সহ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে যোগাযোগ করি। এরপর ০৭/১১/১৫ ইং তারিখে পল্টন থানা পুলিশের সহায়তায় মেয়েটিকে শেরেবাংলা নগর জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করাই। ভর্তিকালে মেয়েটির পরিচয় জানা না থাকায় আমি তার নাম রাখি ‘আদুরী’।
হাসপাতালে সার্বক্ষণিক দেখাশুনা ও সেবাকর্মের জন্য সেই জরিনা বেগমকে নিয়োজিত করি। ডাক্তারদেও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সেবা শুশ্রুষায় মেয়েটি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠার পর মেয়েটিকে জরিনা বেগমের ঢাকাস্থ আদাবরের বাড়িতে এনে রাখা হয়। এক সময় তার মুখ থেকে কিছু শব্দ বের হলে সে কথার সূত্র ধরে আমরা ফেসবুকে এবং আদুরীর ছবি সম্বলিত পোস্টারিং এর মাধ্যমে তার পরিবারকে খুঁজে বের করি। পরবর্তীতে আমরা মেয়েটির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে মেয়েটির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা জানতে পারি। মেয়েটির প্রকৃত নাম জবা। নোয়াখালী জেলার মাইজদী উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুরে তাদের বাড়ি। তার বাবা আলাউদ্দিন একজন রিক্সাচালক ও মা গৃহিনী। আজ থেকে প্রায় ০৬ ছয় বছর আগে বাড়ি থেকে সে অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। অনাহার অর্ধাহার, উদভ্রান্ত পদচারণা ও মানুষের অবহেলায় মেয়েটি ক্রমান্বয়ে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ওদিকে জবার পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে তার ভাগ্যকে ছেড়ে দেয় বিধাতার হাতে। ভাগ্য বিড়ম্বিত সেই জবাকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় রাস্তায় দেখে তাকে উদ্ধারপূর্বক সুচিকিৎসার মাধ্যমে ভাল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করি আমরা। এবং আদুরী সুস্থ হবার পর নোয়াখালীর মাইজদিতে তার নিজ বাড়িতে পরিবারে কাছে হস্তান্তর করি। কচিপাতা: মানিকগঞ্জের মানসিক ভারসাম্যহীন পারুলীর গল্পটা?
২০১৬ সালের ২ আগস্ট ইং তারিখে ঢাকার পল্টনস্থ আমার কর্মস্থল থেকে আদাবরের বাসায় ফেরার পথে মানিকগঞ্জের জিকু নামের এক লোকের সাথে আমার বাসে পরিচয় হয় এবং বিভিন্ন আলাপচারীতার মাধ্যমে লোকটির কাছ থেকে জানতে পারি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুকুরিয়া এলাকার যাত্রী ছাউনীতে দুই বছর ধরে নাম পরিচয়হীন মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মেয়ে অসহায় অবস্থায় দিনাদিপাত করছে। সংবাদটি শুনে আমি আমার বন্ধু যমুনা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার আলী সাব্বিরের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে ঘটনাস্থলে একজন লোক পাঠিয়ে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করি। মেয়েটির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর ২০১৬ সালের ১৯ আগস্ট আমি আমার বন্ধু আলী সাব্বির ও ডাঃ মোঃ শামীম হোসেনকে নিয়ে মানিকগঞ্জের ঘিওরে পুকুড়িয়ার এলাকার যাত্রী ছাউনীতে গিয়ে মেয়েটিকে দেখার পর তাকে উদ্ধারপূর্বক হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়ার বিষয়ে ঘিওর থানা কর্তৃপক্ষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন করি।
২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট আমি ও আমার বন্ধুরা ঘিওর থানা কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দের উপস্থিতিতে ঢাকাস্থ শেরে বাংলা নগর জাতীয় মানিসক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভর্তির উদ্দেশ্যে এম্বুলেন্সে করে মেয়েটিকে নিয়ে আসি। এম্বুলেন্সের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়ান মানিকগঞ্জের পশ্চিম সাহিলী সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামের একটি সংগঠন।
দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর জরিনা বেগমের বাসায় রেখে তার পরিবারের খোঁজ করি। এখন পর্যন্ত পারুলীর পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
কচিপাতা : এবার আসি মানসিক ভারসাম্যহীন রাণীর গল্পে
রাণীকে আমি প্রথম দেখতে পাই সিলেটের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারে। ফেসবুক বন্ধু শেখ কাউসারের একটা স্কুলের প্রাগ্রামের আমন্ত্রণে সিলেটের নবীগঞ্জের আউশকান্দি বাজারে যাওয়ার পর রাণীকে রাস্তায় দেখতে পাই। তার ১ সপ্তাহ পর আবার কিছু বন্ধুদেরকে নিয়ে আউশকান্দিতে গিয়ে রাস্তা থেকে রাণীকে উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে আসি ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করাই। ভর্তির ২দিন পর ফেসবুকের আমার স্ট্যাটাস দেখে রানীর পরিবার হাসপাতালে এসে রাণীকে সনাক্ত করেন। যেহেতু মেয়েটি তার নাম বলতে পারতো না, তাই হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় আমরা মেয়েটির নাম দেই “রাণী”।
রাণীকে সার্বক্ষণিক দেখাশুনার জন্য হাসপাতালে আমরা জরিনা বেগমকে নিয়োগ দেই। দীর্ঘ দেড় মাস চিকিৎসার পর রাণীর পরিবার ঢাকায় এসে রানীকে তার বাবার বাড়ি টাঙ্গাইলে নিয়ে যান।
রাণীকে নিয়ে কিছু কথা : কখনও নিজের নাম শামীমা মিতু, কখনও আবার সানজিদা সাথী বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী রাণী (নতুন নাম)। হাসপাতালের ভর্তি স্লিপে তার নাম রাণী রাখা হয়েছে।
বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে কখনও টাঙ্গাইল, কখনও আব্দুল্লাহপুর ও উত্তরার কথা বলেন রাণী। তবে মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারী যে একজন শিক্ষিত এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য সেটি বোঝা যায় তার কথা শুনেই। কারও সঙ্গে কথা বলার পর ধন্যবাদ দিতেও ভুলেন না তিনি। আবারও কারও সঙ্গে দেখা হলে শুদ্ধ উচ্চারণে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে লাঞ্চ অথবা ডিনার করেছেন কীনা জানতে চান রাণী। কারও কথা ভালো লাগলে হাততালি দেয়ার পাশাপাশি বলেন
থ্যাঙ্ক ইউ। একটু বয়স্ক যারা তাদের আব্বু ও যুবকদের ভাইয়া সম্বোধন করেন তিনি। নিজে কিছু খাওয়ার সময় অন্যের দিকেও বাড়িয়ে দেন তার হাতে থাকা খাবারটি। এসব কারণে রাণী ওই বাজারের সবচেয়ে ভদ্র মানসিক ভারসাম্যহীন নারী হিসেবে পরিচিত ছিল।
রাণীকে নিয়মিত খাবার দেয়া ও খোঁজখবর রাখা শিক্ষক কায়সার আহমেদের জানান, রাণী সম্ভবত বদ্ধ পাগল নয়। তার মধ্যে এখনও মানবতা কাজ করে। বাজারের কারও সঙ্গে পাগলামি পর্যন্ত করেন নি তিনি। ক্ষুধা লাগলে যারই কাছে খাবার চেয়েছেন সবাই তাকে ভালোভাবেই দিয়েছেন।
তিনি বলেন, রাণীর ভালোভাবে যত্ন নিলে তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে যাবেন। কায়সার আহমেদের সেই কথার প্রমাণ পাওয়া গেল নবীগঞ্জ থানা চত্ব¡রে এক নারীর সহযোগিতায় রাণীকে গোসল করানোর পর।
সেখানে রাণী ওই নারীকে বলেছেন, তিন বছর পর তিনি ভালোভাবে গোসল করলেন। গাড়িতে উঠার পর তিনি (রাণী) সবার উদ্দেশ্যে বললেন, দীর্ঘদিন পর আজ আমাকে খুব ফ্রেস লাগছে। মনে হচ্ছে শরীরটা হালকা হয়ে গেছে।
গাড়ি হবিগঞ্জ পার হওয়ার পর গাড়ির লাউডস্পিকারে “আমি যাচ্ছি বাবা, আমি যাচ্ছি” গানটি বাজালে, রাণী সাউন্ড বাড়িয়ে দিতে বলেন। সম্পূর্ণ গানটি শোনার পরপরই রাণীর দু’চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি বের হয়ে আসে। আরেকবার গানটি বাজানো যাবে এমন অনুরোধ করে রাণী বললেন, দীর্ঘদিন পর চোখ দিয়ে পানি বের হলো আজ। সেই গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েন রাণী। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গাড়িতে একটানা ঘুমিয়েছেন তিনি। অবশেষে সেই রাস্তার রাণী ৩ বছর পর ফিরে পেল নতুন জীবন, ফিরে গেল তার পরিবার পরিজনের কাছে।
এক সন্ধ্যায় রাণীর বড় বোন ও এক চাচাতো ভাই সবুজ ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এসে রাণীকে টাংগাইলে তার বাবার বাড়ি থানাপাড়াতে নিয়ে গেছেন। রাণী এখন অনেক সুস্থ আছে। আমরা রাণীর জন্য ২ মাসের ঔষধ কিনে দিয়েছি। তাছাড়া ঢাকার গাবতলী থেকে ৩ জনের বাসের টিকেট কেটে বাসে উঠিয়ে দিয়ে এসেছি।
মানসিক ভারসাম্যহীন কোহিনুর ফিরে পেলো নতুন একটা জীবন ও তার পরিবার।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের ডোমরাকান্দি কৃষি কলেজের রাস্তার পাশে যাত্রী ছাউনির ভেতরে উলঙ্গ এক পাগলীর বসবাস। দীর্ঘ দুই আড়াই মাস ওই রাস্তার পাশ দিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় বিষয়টি চোখে পড়ে আমার ফেসবুক বন্ধু রুহুল আমিন নামের এক দন্ত চিকিৎসকের। মাঝে মধ্যে যাত্রী ছাউনির কাছে দাঁড়িয়ে দেখতেন পাগলীর অসহায়ত্ব।
নিজের কাছে খারাপ লাগলে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর কাছে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেন। কিছু খেতে চাইলে পাশের দোকান থেকে খাবার কিনে এনে দিতেন। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর জন্য কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও আর হয়ে ওঠেনি।
এরই মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে রুহুল আমিনের পরিচয় হয় আমার সঙ্গে। আমার ফেসবুক প্রোফাইলে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চিত্র দেখে বিষয়টি সে আমাকে জানায়।
পরে রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফরিদপুরে চলে যাই। রুহুল আমিনের বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের আকইন গ্রামে।
দুদিন রুহুল আমিনের বাড়িতে থেকে আমি ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর খোঁজ খবর নেই এবং তাকে দেখতে যাই। তাকে হাত-মুখ ধুইয়ে দেই। খাওয়া-দাওয়া করাই।
কোহিনুরকে ঢাকায় নেয়ার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে যাই। জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি গ্রহণ করে ওই নারীর জন্য কিছু কাপড়ের ব্যবস্থা করেন। মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর শরীরে কিছু আঘাত ও ক্ষত থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন জেলা প্রশাসক।
তাকে হাসপাতালে আনা হলে তার পায়ে পুরনো ফ্যাকচার ছিল সেখানে ব্যান্ডেজসহ প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। গত ০৫.০৮.২০১৭ ইং তারিখ রোজ মঙ্গলবার সন্ধায় কোহিনুরের পরিবার ঢাকাস্থ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এসে কোহিনুরকে সনাক্ত করেন। কোহিনুরকে হাসপাতালে দেখতে এসেছিলেন কোহিনুরের ছোট ভাই জয়নাল আবেদিন সরকার, বড় বোন মোসাম্মত মনোয়ারা, দুলাভাই মোঃ নুরুল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি পৌরসভার মহিলা কমিশনার বুলবুলি খাতুন।
কোহিনুরকে ফেসবুকে আমার একটা স্ট্যাটাসের মাধ্যমে গত ১২ই আগস্ট সর্বপ্রথম যিনি সনাক্ত করেছিলেন তিনি হচ্ছেন বেলকুচি পৌরসভার সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম ভাই। তারপর ঈদের ২ দিন আগে বেলকুচি পৌরসভার মেয়র মিসেস আশানুর বিশ্বাস আমাকে কোহিনুরের পরিবার ঢাকা জাতীয় মানসিক হাসপাতালে আসার ব্যাপারে ফোনে কনফার্ম করেন। পরবর্তীতে কোহিনূরের বড় ভাই ঢাকায় এসে নিজ বাড়ি সিরাজগঞ্জে বেলকুচিতে নিয়ে যান।
কচিপাতা : এক একজন রোগীর পিছনে কি রকম অর্থ খরচ হয় এবং এই অর্থের যোগানটা কিভাবে হয়?
প্রতিটা মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীর পিছনে ৭০হাজার থেকে ১লক্ষ টাকা খরচ হয়, বুয়ার বেতন, মেয়েটাকে রাস্তা থেকে নিয়ে আসা, পরিবার খোঁজে বের করা, পরিবারে কাছে ফিরিয়ে দেওয়া পর্যন্ত। আদাবরে আমার বাসার সামনে একটা বাড়িতে থাকে বুয়া জরিনা বেগম। আমি আমার বাসার বারান্দা থেকে পারুলিকে দেখতে পারি। জরিনা বেগমের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলে বাড়ি। অনেক বছর যাবত ঢাকা আদাবরে বাস করে ও বিভিন্ন বাড়ি বাড়িতে কাজ করতে থাকে। ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে আমাদের কাজগুলো বেতন ভিত্তিতে করে। এখন আর বাড়িতে বাড়িতে কাজ করা লাগে না।
এই পুরো কাজের সমস্ত অর্থ আসে আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে।
আপনার আগামী দিনের স্বপ্ন কি?
শামীম আহমেদ: একটি মানসিক হাসপাতাল ও পূণর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা আছে। যেখানে রাস্তায় পড়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলোর বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হবে। সুস্থ হয়ে পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যেতে পারবে। এর পাশাপাশি সেখানে গড়ে তোলা হবে একটি পূণর্বাসন কেন্দ্র, যেখানে থাকবে সুস্থতায় ফিরে আসা মানসিক রোগী। সেখানে আরো পূণর্বাসিত হবে অবহেলিত পরিবার পরিত্যক্ত পথশিশু ও বৃদ্ধ বৃদ্ধা। তবে এটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এই ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান রইলো।
আমি আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই মানবিক কাজটা চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। আমার মৃত্যুর পর যেন আমার মেয়েরা কাজটি চালিয়ে যেতে পারে সেই জন্য তাদেরকেও আমার কাজের সাথে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করি। আমার ২ মেয়ে। একজন ৪র্থ শ্রেণি, একজন ১ম শ্রেণিতে পড়ে।
আমাদের সমাজে পথশিশু, হিজরা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নারী-পুরুষদের নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন। অথচ এসব মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদেরকে নিয়ে কেউ কাজ করছেন না।
সব কিছু সরকার করবে এমনটাও ভাবা ঠিক না। তাহলে এই সমাজে আমাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই? বিত্তবানদের বলব, আসুন সবাই মিলে এসব ভারসাম্যহীন মানুষের পাশে দাঁড়াই। তাদের সুস্থ করে স্বজনদের মাঝে ফিরিয়ে দেই।
পরিশেষে বলব “মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পাশে দাঁড়ান। ওদেরকে পাগল বলবেন না, ওরা মানসিক রোগী, ওদেরকে ঢিল ছুঁড়বেন না, ওদেরকে ঘৃণা করবেন না, ওদেরকে ভালোবাসুন, ওরাও মানুষ”।
সাক্ষাতকার গ্রহণ ও প্রতিবেদন তৈরি : আলেয়া বেগম আলো
আলোকচিত্রে : খন্দকার আকতার হোসেন