মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা প্রশিক্ষক সর্বজিৎ চন্দ্র সূত্রধর

0
523
ইয়োগা প্রশিক্ষক সর্বজিৎ

মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা প্রশিক্ষক সর্বজিৎ চন্দ্র সূত্রধর, ছাত্র/ছাত্রীরা গুরুজি বলে ডাকে। জন্ম, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার চরগোসাইপুর গ্রামের সূত্রধর পাড়ায়। বাবা অনুকূল চন্দ্র সূত্রধর।

মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা শেখার পেছনের গল্পঃ

আমাদের গ্রামে তখন খুব ডাকাতি হত। একদিন আমি উপজেলা শহর থেকে গ্রামের বাড়ি চরগোসাইপুর এ বেড়াতে যাই, সেখানে ওই রাত্রে আমাদের বাড়িতে ডাকাতি হয়। ওইদিন আমার মনে হচ্ছিল, ওদের যদি মেরে ডাকাতি ঠেকাতে পারতাম এরকম একটা জেদ কাজ করছিলো। এর থেকে মূল আগ্রহ তৈরি হয় মার্শাল আর্ট শেখার। তারপর বেড়ানো শেষে হলে চলে আসি উপজেলা শহরে। আমার বাবা উপজেলা শহরে ব্যবসা করতেন, পড়াশোনার জন্য আমি বাবা সঙ্গে উপজেলা শহরে বসবাস করতাম। উপজেলা শহরে থাকার কারণে আমার বন্ধু ছিল অনেক, যাদের মধ্যে একজন বন্ধুর নাম ভিশাল চক্রবতী। সে মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা জানতো।


আমার বাসার কাউকে কিছু না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা শিখতে যেতাম (১৯৯৫-১৯৯৬) বন্ধুর কাছে।
ওখান থেকে শুরু, তারপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জালাল উদ্দীন সরকার (আল-আমীন) ওস্তাদ এর কাছে মিক্স কারাতে শুরু করি।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শুরু করার পর আমার বাবা জানাতে পারেন যে আমি মার্শাল আর্ট তথা কুংফু, ক্যারাটে শিখছি আর এইটা জানার পর শুরু হয় বাবার সাথে আমার নানানরকম সম্যসা। তখন মানুষ ভাবতেন মার্শাল আর্ট শিখলে আপনার সন্তান মাস্তান হয়ে যাবে। আর ঠিক তখনই শুরু হলো প্রতিবন্ধকতা। একপ্রকার বাবার দ্বিমতে মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা চর্চা চালিয়ে যেতাম।
দিনে দিনে মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে, আর সেই আগ্রহ থেকে একসময় এ.বি.জেড নায়েন পুষ্টিং ওস্তাদ এর কাছে দেশীয় মার্শাল আর্ট (উপকান-দো) ও ইয়োগা চর্চা শুরু করি। চর্চা করতে করতে উপকান-দো মার্শাল আর্ট এ ব্ল্যাক বেল্ট ৪র্থ ড্যান অর্জন করি।
এর মাঝে জাপানিজ কারাতে শিখতে বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন এ যোগাযোগ করি। আমার ওস্তাদ আল-আমীন সেন্সি আমাকে জাপানিজ কারাতে শিখতে সহযোগিতা করেন ও বেসিক ট্রেনিং দিয়েছেন। কারাতে ফেডারেশন এ জাপানিজ কোচ হিরোশি ওতা সেন্সির কাছে ট্রেনিং শুরু করি (সতোকান কারাতে) পরে শুনিচি তাকাউরা সেন্সির কাছে ট্রেনিং করি এবং মাসাও কাগাওয়া সেন্সির কাছে ট্রেনিং করে বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন এর অধীনে ব্ল্যাক বেল্ট পরিক্ষা দিয়ে পাশ করি।

২০১১ সালের শেষের দিকে অথবা ২০১২ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ কিকবক্সিং এসোসিয়েশন এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণত সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাফিজ সেন্সির কাছে কিকবক্সিং শিখতে জয়েন করি এবং চর্চা চালিয়ে বাংলাদেশ কিকবক্সিং এসোসিয়েশন থেকে ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করি। বর্তমানে বাংলাদেশ কিকবক্সিং এসোসিয়েশন এর একজন কোচ এর দায়িত্ব পালন করছি। তার সাথে ইয়োগা চর্চা চালিয়ে যাচ্ছি। ওর্য়াল্ড ইয়োগা ফেডারেশন থেকে ২০০ ঘন্টার “ইন্টারন্যাশনাল ইয়োগা টিচার্স ট্রেনিং কোর্স” সম্পন্ন করি। তারপর মহাঋষি পতঞ্জলি ইয়োগা ইন্সটিটিউট থেকে ‘পোস্ট গ্রাজুয়েশন (ডিপ্লোমা)’ সম্পন্ন করি।

কচিপাতা : আপনার বাবা মা সম্পর্কে কিছু বলেন!

সর্বজিৎ : আমার বাবা অনুকূল চন্দ্র সূত্রধর ব্যবসা করেন নবীনগর উপজেলা সদরে। মা দুলন রাণী সূত্রধর গৃহিণী ছিলেন ( ২০১৪ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা জান)।

কচিপাতা : অভিভাবকরা অনেক সময় নিজেরা যেটা হতে পারেননি সেটা সন্তানের উপর চাপিয়ে দেন এ বিষয়ে কিছু বলুন।

সর্বজিৎ : আমাদের দেশে অনেকাংশে দেখা যায়, অভিভাবক তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের উপর নিজদের ইচ্ছেমতো স্বপ্ন চাপিয়ে দেন। এরকমটি আমার সাথেও ঘটেছে। আমার মতে এমনটি করা অভিভাবকদের উচিত নয়। অভিভাবকদের অব্যশই তাদের সন্তানদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া দরকার।

কচিপাতা : শিশু-কিশোরদরে উদ্যেশ্যে কিছু বলুন।

সর্বজিৎঃ তোমরা যে কাজটিই কর না কেন খুবই মনযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করবে। কোন কাজ শুরু করার আগে বাবা /মা, বড় ভাই / বোন অথবা কাছের কোন আপন মানুষ এর পরামর্শ নিয়ে করবে, তাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। একটি বিষয় অবশ্য মনে রাখবে পড়াশোনার বিকল্প কিছু নেই। তাই পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ বেশি দেবে, এবং তার পাশাপাশি শারিরিক ও মানুষিক শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রম এর সাথে যুক্ত থাকবে। এবং তোমরা মোবাইল ব্যবহারের বিষয়ে সর্তক থাকবে। বড়দের সম্মান করবে, সমবয়সীদের সাথে বন্ধুসূলভ আচরণ, ছোটদের স্নেহ করবে।
এমন কোন কাজ করবে না যাতে বাবা-মা ও পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়।

কচিপাতা : অভিভাবকদের উদ্যেশ্যে কিছু বলুন

সর্বজিৎঃ ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া আর ভাল সন্তান হওয়া এক কথা নয়, এটা অভিভাবকদের বুঝা দরকার। আপনার সন্তান সাইন্স, গণিত, ইংলিশ যে কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। তবে অভিভাবক হিসেবে আপনারা জানতে চেষ্টা করবেন যে আসলে আপনার সন্তান কি করতে চায়? তাদের কোন বিষয় নিয়ে আগ্রহ? তাদের স্বপ্ন কি? কোন বিষয় তাদের ভাবতে বাধ্য করে? আপনারা চেষ্টা করবেন তাদের আগ্রহকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের উৎসাহিত করতে। তাতে আপনার সন্তানের মানষিকতা বিকশিত হবে।
তাদের প্রত্যেকটি (ভালো কাজ হতে হবে) কাজে উৎসাহ দিন। আপনি চাইলে তাদের ছোট ছোট সফলতাই পুরষ্কার দিতে পারেন। তাতে উৎসাহ পাবে। ছোট বেলা থেকেই তাদের নিজের কাজ নিজে নিজে করবে এমন মানুষিকতা তৈরি করার চেষ্টা করুন।

কচিপাতা : আপনার পেশা সম্পর্কে কিছু বলুন।

সর্বজিৎ ঃ মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। এই পেশার সাথে সমৃক্ত থাকতে পেরে আমি আনন্দিত কারণ এই পেশাতে সততা, নিয়মানুবর্তিতা, নিজের শরীর-মন সুস্থ রাখার পশাপাশি অন্য অনেক মানুষের শরীর-মন সুস্থ রাখতে সহায়তা করা যায় অনুশীলনের মাধ্যমে । এবং বিদেশের মাটিতে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করা যায়। মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা বিষয়ে কাজ করার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। শিক্ষিত ছেলে/মেয়েদের অন্যান্য পেশার সাথে এই পেশাতে আসা দরকার যেহেতু মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা বিজ্ঞানভিত্তিক আত্মা-রক্ষা ও স্বাস্থ্য-রক্ষামূলক প্রশিক্ষণ।

  • রিপ্রেজেন্টেটিভ ও কান্টি হেড ইয়োগা কোচ, ওয়ার্ল্ড ইয়োগা ফেডারেশন
  • জাতীয় কিক বক্সিং প্রতিযোগিতা-স্বর্ণ পদক (একাধিক)
  • জাতীয় মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতা – স্বর্ণপদক
  • জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতা – তাম্রপদক
  • ৩য় আন্ত-মহাদেশীয় এশিয়া (WUKF) কারাতে প্রতিযোগিতা
  • রৌপ্যপদক
  • WAKO এশিয়ান কিকবক্সিং প্রতিযোগিতা – তাম্রপদক
  • ২০০৪ সালে যামানি একাডেমী অব মার্শাল আর্টস নামে একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করি। বর্তমানে বাড্ডা, ঢাকা তে একটি শাখা চালু রয়েছে।
  • মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা শেখার পেছনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন মা।
  • প্রিয় মানুষ : মা হ ৬ বোন, ২ ভাই (আমি ৪র্থ)
  • বিবাহিত
  • পড়াশোনা : মার্স্টাস (ম্যানেজমেন্ট)।
  • ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ মার্শাল আর্ট ও ইয়োগা নিয়ে কাজ করা।

-আলেয়া আলো

একটি রিপ্লাই দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.