স্বাবলম্বী প্রচেষ্টায় ২ এমবিএ পাস ‘চা- ওয়ালা’

1
96
স্বাবলম্বী প্রচেষ্টায় ২ এমবিএ পাস ‘চা- ওয়ালা’

স্বাবলম্বী প্রচেষ্টায় ২ এমবিএ পাস ‘চা-ওয়ালা’। যশোরের স্থলবন্দর বেনাপোলের দুই বন্ধুর একজন আশিকুজ্জামান এ্যানি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন ও অপর বন্ধু রাশেদুজ্জামান রয়েল যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজ থেকে এমবিএ করেছেন। ফুটপাতে ‘এমবিএ চা-ওয়ালা’ নামে তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়ে সাড়া ফেলেছেন স্নাতকোত্তর (এমবিএ) করা এই দুই বন্ধু।বেনাপোলে এই চায়ের শুরুটা হয়েছে দুই তরুণ উদ্যোক্তার হাত ধরে। ‘এমবিএ চা ওয়ালা’ নামে তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়ে সাড়া ফেলা বিশেষ ধরনের এই চায়ের স্টলের পেছনে রয়েছে রোমাঞ্চকর গল্প।

ভ্রমণপিপাসু এই দুই উদ্যোক্তা জানান, তারা ইউটিউবে ভারতে তন্দুরি চায়ের একটি ভিডিও দেখেন। কেবল সেই চায়ের স্বাদ নিতে দুই বন্ধু ভারতে চলে যান। সেখানে ক’দিন অবস্থানকালে বেশ কয়েকবার চায়ের স্বাদ নেন। এরপর নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে দু’জন মিলে পরিকল্পনা করেন তন্দুরি চায়ের স্টল করার।

আশিকুজ্জামান এ্যানি জানান, চাকরির বাজারে নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার একদমই ইচ্ছা ছিল না। দুই বন্ধুর দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পড়াশোনা শেষ করে নিজেরা কিছু করব। সেই ইচ্ছা থেকেই আজ ছোট
পরিসরে ‘এমবিএ চা ওয়ালা’ নামে তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়েছি। নতুন হলেও বেচাবিক্রি ভালো। বিকেল থেকে রাত অবধি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তন্দুরি চায়ের স্বাদ নিতে আসছেন। প্রতি ভাড়/মটকা (কাপ) চা
বিক্রি করছি ৩০ টাকা। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য দামটি কমানো যায় কি না সেটা ভাবছি।

তিনি আরো জানাান, মাত্র ক’দিন হলো চায়ের স্টলটি শুরু করেছি তাতে বেশ সাড়া পাচ্ছি মানুষের। ভবিষ্যতে এটি আরও বড় পরিসরে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

অপর উদ্যোক্তা রাশেদুজ্জামান রয়েল জানান, কোনো কর্ম ছোট নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নিয়েছি বলে আমাকে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে এমন নয়। স্বল্প পূঁজি নিয়েও একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া
যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় শিক্ষিত বেকারদেরকে চাকরির পেছনে না ছুটে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। সে কথা মাথায় রেখেই বন্ধু এ্যানির পরামর্শে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা তন্দুরি চায়ের এই আইডিয়াটা গ্রহণ করি।

তিনি আরো জানান, তন্দুরি চায়ের স্বাদ এই এলাকার মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তন্দুরি চা বেনাপোলসহ অত্র এলাকায় জনপ্রিয়তা পাবে। অনার্স শিক্ষার্থী রিয়াজ মাহমুদ তন্দুরি চায়ের কারিগর হিসেবে কাজ করছেন।

রিয়াজ জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি আমি একটা ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করতাম। তরুণ উদ্যোক্তা অ্যানি ও রয়েল আমাকে তন্দুরি চা তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দিয়ে ভারত থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকে ফিরে বেনাপোল বাজারের সোনালী ব্যাংকের পাশে পুকুরপাড় জামে-মসজিদ সংলগ্ন এই ‘এমবিএ চা ওয়ালা’ দোকানে তন্দুরি চা তৈরির কাজ শুরু করেছি।

আরও পড়ুন: কালীগঞ্জের হাট বাজারের পথের ধারে শীতকালীন বাহারি পিঠা

চা তৈরির প্রণালী সম্পর্কে রিয়াজ জানান, ‘তন্দুরি চা’ তৈরি করতে হলে আগে থেকে গরম হওয়া তন্দুরে মাটির ভাড়গুলো রাখা হচ্ছে। এরপর সেই জলন্ত মাটির ভাড়ে (কাপ) অর্ধেক তৈরি হওয়া চা ঢালা হচ্ছে। ঢালার সময় বুদবুদ উঠার পরই চা তৈরি হয়ে যায়। গরম ভাড়ের এ তন্দুরি চায়ে পাওয়া যাবে ধুম্র স্বাদ যা আপনাকে বারবার নিয়ে আসবে আমাদের কাছে।

চা পান করতে আসা কয়েক ব্যক্তি জানান, তারা লোকমুখে জানতে পেরেছেন বেনাপোলের দুই যুবক স্নাতকোত্তর পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে ‘এমবিএ চা ওয়ালা’ নামে একটি তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়েছেন। তাই তারা চলে এসেছেন সেই টি-স্টলের চা পান করতে। চাকরির পেছনে ছুটে সময় নষ্ট না করে এই দুই যুবক ছোট পরিসরে হলেও নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে, তা তাদের খুবই ভালো লেগেছে। এমবিএ পাস করা এই যুবকদের দেখে এলাকার অন্য যুবকরাও পড়াশোনা শেষ করে নিজেরা কিছু করার চেষ্টা করবে বলে তারা মনে করেন।

1 মন্তব্য

একটি রিপ্লাই দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.