আজব সাইকেল- আলম মাহফুজ

0
1223
আজব সাইকেল- আলম মাহফুজ

সকাল ৭টা। আজ স্পর্শিয়াদের স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। এই নিয়ে গতকাল রাত থেকে সে তার মার সাথে কতো কি যে প্ল্যান করছে। পরীক্ষা শেষে কোথায় যাবে, কি করবে, আরো কতো কি! আজ তার পদার্থ পরীক্ষা এবং এটা তার সবথেকে প্রিয় সাবজেক্ট। কিন্তু আজ সকাল থেকে আনন্দে তার কোনো পড়াই হয় নি। যাই হোক ৯টা বেজে গেছে। ১০টায় ওদের পরীক্ষা। ওর মা ওকে খাইয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দিলো।

দুপুর ১টা। ওদের পরীক্ষা শেষ। ওর পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে। ওদের সবার প্ল্যান ছিলো পরীক্ষা শেষে ওরা একটা রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে। কারণ এটাই ওদের স্কুল জীবনের শেষ বার্ষিক পরীক্ষা। এরপর ও ১০ম শ্রেণিতে উঠবে। তখন তো আর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা থাকবে না। তখন ওরা এসএসসি দেবে। ওরা সবাই রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো যে ছুটিতে কে কী করবে। সবার নানা ধরনের ইচ্ছার কথা বলল। কিন্তু স্পর্শিয়া বলল, তার এক আজব ইচ্ছার কথা। তা হচ্ছে সে ছুটিতে সাইকেল কিনে সাইকেল চালানো শিখবে। এরপর বাসায় এসে ও ওর মাকে বলল। কিন্তু ওর মা কিছুতেই রাজি হলো না। তারপর ওর বাবাকে বলতেই ওর বাবা ওকে সাইকেল কিনে দিলো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সাইকেল চালাবে কিভাবে? ওতো সাইকেল চালাতে পারেই না। তবুও সে হাল ছাড়লো না। তার ছিলো অদম্য ইচ্ছা শক্তি। সে দিনরাত সাইকেল নিয়ে থাকতো। একদিন হঠাৎ সাইকেল চালানো শিখে গেলো এবং নিজের অজানতেই অনেক দূর চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর সে নিজেকে একটা নির্জন জায়গায় আবিষ্কার করলো। সে দেখলো অনেক বড় একটা গর্ত। গর্তের দিকে তাকাতেই দেখে একটা এতো বড় বোতল। খুবই আজব ছিলো বোতলটা। এমন সময়  সে শুনতে পারলো, “নাইন ইনটু নাইন। নাইন ইনটু নাইন।” হঠাৎ সে পেছন দিকে তাকাতেই কে যেনো তার মাথা জোর করে  চেপে ধরলো। কিছুক্ষণ পর পুরো মানুষের মতো একটা প্রাণী বেরিয়ে এলো। কিন্তু তার চোখ ছিলো একটা। স্পর্শিয়া জিজ্ঞাসা করল, তুমি কে? কোথা থেকে এসেছো?

প্রাণীটি বলল, আমি নাইন ইনটু নাইন। আমি কেপলার ৪৫২-বি থেকে এসেছি। এই গ্রহটি পুরো আমাদের গ্রহের মতই। কিন্তু একটা অমিল রয়েছে। আমাদের গ্রহে ২টি সূর্য উঠে আর এই গ্রহে ১টি সূর্য উঠে। আমি আজ থেকে ৪৫০ কোটি আলোকবর্ষ পূর্বে রওনা দিয়েছিলাম।

স্পর্শিয়া বলল, তুমি আমাদের ভাষা জানলে কিভাবে?

প্রাণীটি বলল, তোমার মস্তষ্ক থেকে তোমার ভাষা কপি করে নিয়েছি।

স্পর্শিয়া বলল, তুমি এখানে কেনো এসেছো? প্রাণীটি বলল, তোমাদের গ্রহটি দেখতে। কিন্তু তোমাদের গ্রহটিতে প্রাণীদের আয়ু খুব কম। তোমাদের গ্রহ অনেক নোংরা, দূষিত। আমি আর থাকতে পারবো না। আমি যাচ্ছি। তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। এড়ড়ফ ইুব, স্পর্শিয়া।

স্পর্শিয়া বলল, দাঁড়াও, আমার কিছু কথা আছে।

তখন প্রাণীটি দূর থেকে বলল, যে কথা আছে সেটা তোমার সাইকেলকে বলো। এটা আমাদেরই বানানো। তোমাদের গ্রহতে এসে এই যানটি দেখে ভালো লেগেছিলো। তারপর এই সাইকেলটি বানিয়ে একটা দোকানে রেখে এসেছিলাম আর এটা তোমার বাবা কিনে এনেছে।

হঠাৎ করে স্পর্শিয়ার মা বলে উঠল, কি রে স্পর্শিয়া, ওঠ। পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছিস নাকি? ৯টা তো বাজতে চলল। রেডি হয়ে  নে। পরীক্ষা আছে তো।

স্পর্শিয়া ঘুম থেকে চমকে উঠলো। ঘুম থেকে উঠে ভাবতে লাগলো, এটা তাহলে স্বপ্ন ছিলো! ভাবতে ভাবতেই স্কুলে গেলো সে। স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখল তার বাবা তার জন্য সাইকেল কিনে এনেছে। কিন্তু অদ্ভুদ ব্যাপার হচ্ছে সাইকেলে ঐ চোখটা আর্ট করা ছিলো যেটা সে তার স্বপ্নে দেখেছিলো।

একটি রিপ্লাই দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.