টুনির মেজো মামা অনেক মজা করে গল্প করেন। তার পেটের মধ্যে কত যে গল্প, কত যে কথা! বিকেল হলেই আমরা টুনিদের ছাদে গিয়ে বসি। একেক দিন একেক গল্প। কোনোদিন রাজার গল্প, কোনোদিন পরীর। আবার কোনোদিন জীবন গড়ার গল্পও করেন মামা। আমাদের খুব ভালো লাগে। আজ মামা গল্প করবেন স্বপ্ন নিয়ে।
টুনিদের পোষা ময়না পাখিটাও আমাদের সাথে আজ যোগ দিয়েছে। টুনির মামা যেই শুরু করলেন- স্বপ্ন সবাই দেখে। অমনি ময়নাটাও চিকন সুরে বলে উঠল- স্বপ্ন, স্বপ্ন্!
আমরা হাসতে লাগলাম।
মামা শুরু করলেন।
বন্ধুরা, চাইলে তোমরাও কিন্তু আমাদের সাথে যোগ দিতে পারো।
স্বপ্ন সবাই দেখে। সবাই স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। একেকজনের থাকে একেক রকম স্বপ্ন। তোমার যেমন স্বপ্ন আছে। আমারও একটা স্বপ্ন আছে। তবে বন্ধু, এই স্বপ্ন কিন্তু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্ন নয়। এটা হলো- জীবনের স্বপ্ন। সবার জীবনেই এমন একটা স্বপ্ন থাকা চাই-ই চাই। তুমি কি হতে চাও, কি তোমার স্বপ্ন? এটা কিন্তু আগে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে। তাহলে জীবন চলাটা অনেক অনেক সহজ হবে।
অবশ্য স্বপ্নকে সত্যি করতে হলে পরিশ্রম করতে হয়। স্বপ্ন পর্যন্ত পৌঁছাতে হলে সে অনুযায়ী কাজ করতে হয়।
তোমরা নিশ্চয়ই ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের নাম শুনেছ?
তিনি কিন্তু চমৎকার একটি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন- স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন হলো সেটাই যেটা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না। অর্থাৎ স্বপ্নকে সত্যি করতে অনেক অনেক পরিশ্রম করতে হয়, কাজ করতে হয়। স্বপ্নকে সত্যি করতে প্রয়োজনে ঘুম কমিয়ে কাজ বাড়িয়ে দিতে হয়।
পৃথিবীতে যত সফল মানুষ রয়েছেন সবাই কিন্তু স্বপ্ন দেখেই বসে থাকেন নি। স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্যে তারা অনেক কাজ করেছেন। তারপরই না তাদের জীবনে কত সুখ, কত আনন্দ!
ময়না পাখিটা বলে উঠল- আনন্দ, আনন্দ।
মামা বলে চলেছেন- আমেরিকার ৪৪তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক হোসাইন ওবামা।
জন্ম তার অতি সাধারণ ঘরে। তার স্বপ্ন ছিল তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন।
একান্তই নিজের চেষ্টায় তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করেন। বিভিন্ন বাধা এসেছে। তিনি কিন্তু পিছপা হন নি। তিনি ছিলেন তার স্বপ্নে অটল। স্বপ্ন থেকে এতোটুকু সরে যান নি তিনি। ফলে তিনি ঠিকই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছিলেন।
ঢাকার উদয়ন স্কুলের ছাত্র ছিল রুবাব খান। ক্লাস সিক্সে পড়া অবস্থায়ই তার স্বপ্ন ঠিক হলো, সে জ্যোতির্বিজ্ঞানী হবে। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে সময় পার করতে লাগল এবং এক সময় সত্যি সত্যি সেই ছেলেটিই হয়ে গেল বিশ্বখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি আজ ড. রুবাব খান। বাংলাদেশি এই জ্যোতির্বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে মহাকাশে পাঁচটি সুপারস্টারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলো।
এভাবেই যত ব্যক্তি সফল হয়েছেন সবার চোখেই কিন্তু একটা করে স্বপ্ন ছিল। আর স্বপ্নকে বাস্তবায়নে তারা মেধা দিয়েছেন, চেষ্টা করেছেন। চেষ্টার ফলেই তারা সফল হয়েছেন। তাই জীবনের শুরুতেই সবার একটা করে স্বপ্ন ঠিক করা দরকার। নির্দিষ্ট একটি লক্ষ থাকা দরকার। মনছবি থাকা দরকার।
তো বন্ধুরা, তোমরা কে কি হতে চাও? ডাক্তার, শিক্ষক, সমাজসেবক নাকি ক্রিকেটার? চলো, চিন্তার খেলা শুরু করি। চিন্তা করে খুঁজে বের করো, তুমি কি হতে চাও।
রাব্বী হাত তুলল, আমি প্লেন চালাতে চাই। মুন্নী বলল, মামা, আমি ছবি আঁকতে চাই।
মামা বললেন, উহু, এভাবে নয়। চিন্তা করতে হবে। চিন্তা করো। তারপর সিদ্ধান্ত নাও।
ময়না পাখিটি আবারো চিৎকার করে উঠল- ‘চিন্তা করো, চিন্তা করো’।
মামা বললেন, তুমি যা-ই হতে চাও না কেন- তোমাদের বাবা-মা, শিক্ষক বা গুরুজনদের সাথে আজই বসে পড়বে। জানাতে হবে তুমি কি হতে চাও। তারপর উঠেপড়ে লাগবে স্বপ্ন পূরণের জন্যে। স্বপ্নকে কিন্তু কখনোই ভোলা যাবে না। স্বপ্ন সবসময় চোখের সামনে রাখতে হবে। স্বপ্নকে সাথে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব সামনের দিকে। দেখবে, একদিন আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবেই।
মামার কথা শুনে টুনি, আমি, বাদল- আমরা সবাই মিলে চিন্তা করতে শুরু করলাম। ওদিকে ময়না পাখিটা তখনও চিৎকার করে চলেছে- চিন্তা করো, চিন্তা করো। স্বপ্ন, স্বপ্ন।