লোকটির নাম ছিল তিলাকি। সে থাকত ঘন, বিশাল এক ঘাসবনের কাছে। তার ছিল চিরল গাছের শুকনো পাতায় ছাওয়া এক কুটির। তিলাকি ছিল হাসিখুশি স্বভাবের এক মানুষ। ঘাসবনের এক শিকারি তাকে একবার ছোট্ট, তুলতুলে এক খরগোশ ছানা উপহার দিল। তিলাকির সহজ, সরল মুখ দেখে ভালো লেগে গিয়েছিল শিকারির। খরগোশ ছানাটিকে পেয়ে তিলাকি তো মহাখুশি। এজন্য শিকারিকে সে অনেক ধন্যবাদ দিল। তারপর খরগোশের মাংশ দিয়ে এক হাঁড়ি সুরুয়া তৈরি করল। টকটকে লাল রঙের সুরুয়া। বনজ লতাপাতা মেশানোর জন্য তাতে ছিল ঝাঁঝালো গন্ধ। সেই লাল সুরুয়ার চমৎকার স্বাদ হয়েছিল। শিকারিকে নিমন্ত্রণ করল তিলাকি। শিকারি তো খরগোশের মাংশের তৈরি সেই লাল সুরুয়া খেয়ে বলল, বাহ, দারুণ হয়েছে তো। চমৎকার হয়েছে। সত্যি করে বলতে কি অনেক দিন আমি এমন মজার সরুয়া খাইনি। শিকারির আয়েস করে খাওয়ার পর খরগোশের সুরুয়ার বাকি অংশটুকু তিলাকি উট পাখির ডিমের খোলার মাঝে জমিয়ে রাখল। এর বেশ কিছুদিন পর তিলাকির কুটিরের ঝাপে ধাক্কা দেয়ার শব্দ। ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করে তিলাকি, কে? কে এসেছে? বাইরে থেকে মোটা গলায় শোনা গেল, তোমাকে দিন কয়েক আগে যে শিকারি খরগোশ উপহার দিয়েছিল আমি তার এক বন্ধু। তিলাকি তখন ঝাপ খুলে নতুন অতিথিকে ঘরের ভেতরে এনে বসায়। তাকেও খেতে দেয় খরগোশের সুরুয়ার খানিক অংশ। লোকটি মন ভরে সেই সরুয়া খায়। তোফা হয়েছে। ভালো হয়েছে। লোকটি তিলাকির রান্নার প্রশংসা করে ।
আমাদের তুমি চিনতে পারছ না। যে শিকারি তোমাকে খরগোশ উপহার দিয়েছিল। আমরা হলাম গিয়ে তার বন্ধুর বন্ধু। তাদের কথা শুনে তিলাকি যেন খানিকটা অবাকই হয়। ও, তা ভেতরে আসুন আপনারা। তিলাকি ভদ্রতা করে তাদের খরগোশের সেই চমৎকার সুরুয়া খেতে দেয়। আর এভাবে তিলাকির সবাইকে সুরুয়া দিয়ে আপ্যায়নের কথা আশপাশের গা গোরামে ছড়িয়ে যায়। এর মধ্যে খরগোশের মাংসের চমৎকার লাল সুরুয়া খেতে পাওয়া যায়। একদিন হলো কি প্রায় জনা পঁচিশ লোক তিলাকির কুটিরে এসে হাজির। তারা এসে তিলাকিকে জিজ্ঞেস করল, এই যে, আমাদের সবাইকে চিনতে পারছ তো। সেই যে তোমাকে খরগোশ উপহার দিয়েছিল যে শিকারি আমরা হলাম গিয়ে তার বন্ধুর বন্ধুদের বন্ধু। এ কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেলল তিলাকি। বলল, তাই নাকি! তা আসুন আসুন, ভেতরে এসে বসুন। কখন খেতে পাবে গরম ধোঁয়া ওঠা খরগোশের সুরুয়া।
লোকগুলো বুপ ঝুপ করে ঘাস দিয়ে বোনা চাটাইতে বসে পড়ল। তিলাকি তাদের সামনে নিয়ে এলো একপাত্র নোংরা, দূষিত পানি। সেই পানি থেকে ভকভক করে বিচ্ছিরি গন্ধ বেরুচ্ছে। পেটের ভেতরে নাড়িভূড়ি সব উলটে আসার জোগাড়। লোকগুলো তো ঐ নোংরা পানি দেখে ভীষণ অবাক। এ কি কা-! তারা রেগেমেগে জিজ্ঞেস করে, তুমি আমাদের এ কী খেতে দিলে? ওয়াক থু। তিলাকির সাফ উত্তর। এটা হলো গিয়ে আপনাদের বন্ধুদের বন্ধুর বন্ধু আমাকে যে খরগোশটিকে উপহার দিয়েছিল সেই খরগোশের সুরুয়ার সুরুয়ার সুরুয়া। আশা করি এবার তাহলে বুঝতে পেরেছেন। – এরপর থেকে তিলাকির কুটিরে খরগোশের লাল সুরুয়া খাওয়ার জন্য আর কেউ যায় নি।