চাইল্ডহুড ওবেসিটি

0
1202
Fatty-baby

অনেক বাবা মা-ই ভেবে থাকন যে, বাচ্চা যত গোলগাল সে তত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। কিন্তু অধিকাংশ সময় অতিরিক্ত ওজন বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। জেনে নিন চাইল্ডহুড ওবেসিটির (Childhood Obesity) নানা তথ্য।

বাচ্চার স্বাস্থ্য নিয়ে প্রত্যেক বাবামা-ই চিন্তা করেন। তবে ওবেসিটি এমন একটা সমস্যা যা অনেক সময় নজর এড়িয়ে যায়। বাচ্চার উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওজন বাড়ে, তবে তা সঠিক অনুপাতে বাড়ছে কিনা সে দিকে খেয়াল রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। না হলে কখন যে আপনার বাচ্চা ওবেস হয়ে যাবে আপনি বুঝতেও পারবেন না।

কী করে বুঝবেন যে আপনার বাচ্চা ওবেস কিনা:

নিয়মিত বাচ্চার দৈহিক ওজন মাপুন। প্রত্যেক বয়সের জন্য একটা কাংখিত দৈহিক ওজন আছে। যদি আপনার বাচ্চার ওজন তার জন্য নির্দিষ্ট মাপের থেকে ২০% বেশি হয়, তা হলে বুঝবেন বাচ্চার ওবেসিটির সমস্যা রয়েছে।

বেসাল মেটাবলিক পার্সেন্টাইল চার্ট (Basal Metabolic Percentile Chart) ব্যবহার করেও ওবেসিটি মাপা যায়। আপনার বাচ্চার মেটাবলিক ইনডেক্স (Metabolic Index) যদি ৯৫ পার্সেন্টাইলের উপরে হয়, তাহলে জানবেন আপনার বাচ্চা ওবিস গ্র“পে পড়ে।

ওবেসিটির রিস্ক ফ্যাক্টর:

বাচ্চারা আজকাল খুব একটা খেলাধুলা ছুটাছুটির সুয়োগ পায় না। বাড়িতে বসে ইন্টারটে র্সাফ বা ভিডিও গেম খেলা বা টেলিভিশন দেখাটাই তাদের কাছে প্রধান আর্কষণ। এ রকম শারীরিক শ্রমহীন জীবন যাপনের জন্য যাথারীতি বাচ্চাদের ওজন বাড়তে থাকে এবং ক্রমশ তারা ওবেসিটির দিকে এগোয়।

টিভি দেখাটা বাচ্চাদের কাছে প্রায় একটা অ্যাডিকশন। খেলাধুলা ছেড়ে বাচ্চারা বাড়িতে বসে টিভি দেখাটা বেশি পছন্দ করে। আর টিভি দেখতে দেখতে চিপস, চকলেট, পপকর্নের মতো মুখরোচক খাবার খাওয়া এখন রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এক দিকে ক্যালরি গ্রহণ বৃদ্ধি, অন্যদিকে খেলাধুলোর প্রতি অনীহা, সব মিলিয়ে ওজন দ্রত হারে বাড়তে থাকে।

বাচ্চাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে তারা কী খেতে ভালবাসে, বেশিরভাগ বাচ্চাই উত্তর দেবে, চকোলেট, কোল্ড ড্রিংক, আইসক্রিম, রোল। আর কেক পেস্ট্রি তো আছেই। এক কথায় জাঙ্ক ফুড। এই সব খাবারের মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ খুব বেশি থাকে যা স্বাভাবিক ভাবেই ওজন বাড়িয়ে দেয়।

বাচ্চারা সাধারণত বাবা-মাকে দেখে অনেক কিছু শেখে। আর আজকের দিনে বাবা-মায়েরাই যেহেতু শারীরিক শ্রম / ব্যায়াম/ এক্সরসাইজের ব্যপারে উদাসীন হয়ে পড়ে। ফলে দৈহিক স্থুলতা অর্জন ও শারীরিক সুস্থ্যতা হয়ে পড়ে এবং রেজাল্ট ইজ ওবেসিটি।

বেশিরভাগ পরিবারেই আজকাল বাচ্চার সংখ্যা ১ বা ২ থাকে। ফলে বাবা-মায়েরা একটু বেশি তাদের প্যাম্পার করে থাকেন। বাচ্চার স্বাস্থ্য ভাল হবে এই ভেবে অনেক সময় তারা বেশি করে বাচ্চাকে খাওয়াতে থাকেন। শুধুমাত্র বাচ্চাকে খুশি করতে তাঁর যা খেতে ইচ্ছে করে সেই খাবার নিমিষে হাজির হয়ে যায়, তা সে যতই হাই ক্যালরিযুক্ত খাবার হোক না কেন।

চাইল্ডহুড ওবেসিটির নেগেটিভ ইফেক্টস:

ছোটবেলায় যদি আপনার বাচ্চা অতিরিক্ত মোটা হয়, বড় হয়ে ওজন আরও বাড়তে পারে, ফলে নানা রকম অসুখ যেমন করোনারি হার্ট ডিসিজ, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ইত্যাদি হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।

অতিরিক্ত ওজনের ফলে বাচ্চা সহজেই ক্লান্ত এবং কর্ম উদ্যমহীন হয়ে পড়ে।

অনেক সময় মোটসোটা বাচ্চারা স্কুলের বিভিন্ন কর্মকান্ডে পুরোপুরি পুরোপুরি অংশ গ্রহণ করতে পারে না। কখনও কখনও অন্য বাচ্চারাও নানা রকম ভাবে স্থূলকায়া বাচ্চাদের টিজ করে। ফলে ওদের মধ্যে হীনমন্যতা বোধ বা মানসিক চাপ দেখা যায়।

কী করে ওবেসিটি আটকাবেন:

৬ মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ান, এতে ওবেস হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।

বাচ্চাকে স্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করুন। সুষম খাদ্যের ওপর নজর দিন। খেয়াল রাখবেন যেন খাদ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল পরিমান মতো থাকে। কোনও কিছুরই আধিক্য যেন না থেকে, তা হলেই বাচ্চা ভালভাবে বেড়ে উঠবে।

টিভি দেখতে দেখতে বাচ্চার চিপ্স, সফট ড্রিংক খাওয়ার অভ্যেসকে প্রশয় দেবেন না। আউটডোর গেমস খেলতে বাচ্চাকে উৎসাহ দিন।

বাড়িতে জাঙ্কফুড খাওয়ার অভ্যাস কমান। বাচ্চাকে বাড়ির খাবার সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে খেতে দিন যাতে বাইরের খাবারের প্রতি আর্কষণ কমে যায়।

ডাঃ শাহজাদা সেলিম
এমবিবিএস, এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম), এমএসিই (ইউএসএ)
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
মোবাঃ ০১৭৩১৯৫৬০৩৩, ০১৫৫২৪৬৮৩৭৭, ০১৯১৯০০০০২২

একটি রিপ্লাই দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.