সুহা এইচ ডব্লিও খাতা নিয়ে কখন থেকে বসে আছে। ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী। কিন্ডার গার্টেন স্কুলে। টিচার বোর্ডে লিখে দিয়েছেন কতগুলো অক্ষর। বাক্য গঠন করতে হবে। খাতায় নোট করে নিয়ে এসেছে সুহা।
ক. সমান সমান দিয়ে সামনে লিখলো কাক। কাক একটি শহুরে পাখি।
খ. খাল। আমাদের গ্রামে খাল আছে।
স=…..
একটু ঠেকে আছে সে বাবাকে দেখে মার অগোচরে সাহায্য চাইছে। ফিস্ ফিস্ করে বলে বাবা, একটু বলনা দন্তস্যতে বাক্য গঠন কি হবে?
বাবা ওর পাশে বসলো অনেক দিন পর। সুহার খাতা দেখে তাকালো স্নেহাসিক্ত দৃষ্টিতে। সুহা সুযোগ পেয়ে বাথরুমে ঢুকলো। বাবা হালকা দাগে পেনসিল দিয়ে লিখছে, যাতে সুহা হাত চালিয়ে নিজের লেখা হিসেবে জাহির করতে পারে।
ক= কলম = আমরা কলম দিয়ে লিখি।
খ= খড়ম = গাঁয়ের লোকেরা বৃষ্টির দিনে খড়ম পায়ে হাঁটে।
স= সোনা = সোনার গহনা বহু দামী।
ড= ডাল = ডাল খাওয়া ভাল।
ম= মাস = বার মাসে একবছর।
ল= লাল= লাল একটি রংয়ের নাম।
ও ঘর থেকে মা’র কথা শুনা যায়। সুহা তোমার বাক্য গঠন শেষ হলে অঙ্ক কর। আমি আসছি…
সুহা দৌড়ে এসে বাবাকে সরিয়ে দেয়। বাবা সরে যাও। মা আসতে পারে। মা দেখলে দুজনকেই বকবে। খাতার দিকে তাকিয়ে অবাক হয় একি লিখেছ, খড়ম। খড়ম কী? আমাদের বইতে খড়ম নামে কিছু নেই তো। কি যা-তা করেছ? বাবা তুমি কিস্যু জান না? যাও ভাগো। দন্তস্যতে সোনা কেন? আর কিছু হয় না? আমার সোনার বাংলা লিখতে পার না?
মার পায়ের আওয়াজ পেয়ে সুহা পাতা উল্টে দেয়। বাবাতো চলেই গেছে। মার হাতে শাহানের জামা-কাপড় আরো কি কি যেন। মা নিশ্চয় বাথরুমে ঢুকবে। দরজায় দাঁড়িয়ে সুহাকে বলে আজ থেকে তোমার নতুন টিচার আসবে।
তোমার রাজু মামা। তুমি চেন। ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। খুব ভাল ছাত্র। ভাল ছাত্র না হলে ভাল শিক্ষা হয় না। মনযোগ দিয়ে পড়বে। অযথা প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করবে না। ওর সময়ের খুব দাম। বহু কষ্টে ওকে রাজি করিয়েছি। আধ ঘণ্টায় অনেক কিছু শিখতে পারবে। সবটাতেই ঘাড় নেড়ে সায় দেয় সুহা। তার নিজের ভেতর চোরাচুরি ভাব। মা এসে যদি খাতাটা ওল্টো দেয় ধরা পড়ে যাবে। মনে মনে চায় এ মুহূর্তে যেন কারেন্ট চলে যায়, নয়তো শাহান কেঁদে উঠুক। শাহান কাঁদলে মা ওর রুমে ছুটে যাবেই।
তাই বলো। শাহানের কান্নার শব্দ শুনে সুহা স্বস্তি পেল। মা দৌড়ে গেল শাহানের রুমে। খটাং খটাং শব্দ হলো কলবেলে। সুহা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে রাজু মামা।
হাই, হ্যালো বলে রাজু মামা সোজা সুহার রুমে। একটা চেয়ার টেনে
বসে বলে কী করছিলে?
খাতা টেবিল থেকে টেনে নিয়ে বাবার লেখাগুলো দেখে বলে, ছিহ্ এসব কি লিখেছ?
সুহা ফিস্ ফিস্ করে বলে-বাবা।
Ñবাবা, বাবা মানে? তোমার বাবার হাতের লেখা? সেনটেন্স মেকিং। কি বাজে। দাও। দাও। পেনসিল দাও।
মার গলার শব্দ শুনে সুহা দৌড়ে যায় শাহানের রুমে। ইস্সিরে শাহানতো টয়লেট করে দিয়েছে। মা টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করছে। নাকে আঙ্গুল চিপে রাজু মামার আগমন বার্তা পৌঁছে দেয়। ফিরে এসে দেখে রাজু মামার কর্ম শেষ। উঠে যেতে যেতে বলে, এগুলো নিজ হাতে আবার লিখবে। তোমার টিচার ইমপ্রেস হবে। একদম ডিজিটাল ওয়ার্ড। আজ তাড়া আছে। মামা চলে যায়। সুহা পড়তে চেষ্টা করে:
ক= কম্পিউটার। আজকাল কম্পিউটারের বিকল্প নেই।
স= স্পিকার। কম্পিউটারে স্পিকার থাকে।
ড= ডিজিটাল। এখন ডিজিটাল যুগ।
ম= মাউস। কম্পিউটারে মাউস দিয়ে ক্লিক করা হয়।
ল= ল্যাপটপ। ল্যাপট বহনযোগ্য মিনি কম্পিউটার।