একদিন এক নিঃস্ব লোক রাসূলের (সাঃ) নিকট এসে কিছু সাহয্য চাইল। তখন রাসূলের নিকট কিছুই ছিল না। তিনি লোকটাকে হযরত উসমানের নিকট পঠালেন। দরিদ্র ব্যক্তিটি হযরত উসমানের (রাঃ) গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখে যে একদল পিঁপড়ে বেশ কিছু শস্য একটি স্তুপ থেকে গর্তে নিয়ে যাচ্ছে। হযরত উসমান(রাঃ) শস্যগুলো একত্রিত করে কিছু শস্য পিঁপড়ের গর্তের কাছে ছড়িয়ে বাকীগুলো আবার স্তুপে রেখে দিচ্ছিলেন। লোকটি ধারণা করলো যে, হযরত উসমান বড় কৃপণ। সে মনে মনে ভাবলো যে, দরিদ্র হওয়া স্বত্ত্বেও সে নিজে পিঁপড়ের মুখ থেকে শস্য কেড়ে নিতো না। তাই কিছুই না চেয়ে লোকটি চলে গেল।
পরদিন লোকটি আবার রাসূলের নিকট উপস্থিত হল এবং কিছু চাইল। সে রাসূলকে জানাল যে, কৃপণ উসমানের (রাঃ) নিকট কিছুই আশা করা যায় না, তাই সে কিছুই চায়নি। রাসূল (সাঃ) তাকে আবার হযরত উসমানের নিকট পাঠালেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও লোকটি গেল এবং দেখতে পেল যে হযরত উসমান তার গৃহকর্মীকে বাতির সলতে উঁচু করে দেওয়ার দায়ে ধমকাচ্ছে। কারণ তাতে অধিক তেল খরচ হয়। দরিদ্র লোকটি মনে মনে ভাবলো যে, তার বাড়িতে আলো আরও উজ্জ্বলভাবে জ্বলে এবং সে কখনও এরূপ তেলের হিসাব করে না। হযরত উসমানের কৃপণতা সম্বন্ধে তার ধারণা আরো জোরদার হলো। কিছু না চেয়েই লোকটি আবার রাসূলের নিকট ফিরে গেল। হযরত উসমানের বিরুদ্ধে কৃপণতার অভিযোগ শুনে রাসূল (সাঃ) মৃদু হাসলেন এবং লোকটিকে আবার বললেন হযরত উসমানের কাছে ফিরে যেতে এবং কিছু চাইতে।
তৃতীয়বার লোকটি উসমানের নিকট এসে দেখে যে হযরত উসমানের বাড়িতে তুলা শুকাতে দেয়া হয়েছে। তুলা ঢেকে দেয়া হয়েছিল জাল দিয়ে। জালের নিচ হতে কিছু কিছু তুলা বাতাসে উড়িয়ে নিচ্ছিল, হযরত উসমান সেই তুলাগুলোকে সংগ্রহ করে এনে আবার জালের নিচে রাখছিলেন! লোকটির মন অত্যন্ত বিরূপ হয়ে উঠলো। ভাবলো এমন কৃপণও কি কিছু দান করতে পারে? তবুও যেহেতু রাসূল (সাঃ) তাকে তিনবার উসমান (রাঃ)-এর কাছে পাঠিয়েছেন, তাই সে গিয়ে কিছু চাইল।
হযরত উসমান (রাঃ) ভাবলেন লোকটিকে কি দেওয়া যায়, যে লোককে রাসূল তার নিকট সাহায্যের জন্য পাঠিয়েছেন, তার চাইতে সাহায্য নেয়ার যোগ্য আর কে হতে পারে? তখন দেখা গেল বেশ দূরে একটি সরু রেখা। রেখাটিকে একটি উটের কাফেলা বলেই মনে হল। কিছুক্ষণ পর হযরত উসমান বুঝতে পারলেন, যে কাফেলা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় গিয়েছিল সেটাই ফিরে আসছে। হযরত উসমান তাকে লিখে দিলেন যে ঐ কাফেলার সবচেয়ে ভাল উটটি এবং যার ওপর সবচেয়ে বেশি দ্রব্যসম্ভার আছে সেটিই সে নিতে পারে। লোকটি প্রথম মনে করল যে হযরত উসমান তামাশা করছেন। কিছুক্ষণ কথাবার্তার পরও লোকটি তার দান সম্পর্কে নিঃন্দেহ হতে পারল না। সন্দিহানচিত্তে লোকটি গেল কাফেলার নিকট। সবচেয়ে ভালো এবং প্রথম উটটিই তার পছন্দ হল। সেটি সে নিতে চাইল। কাফেলার পরিচালক অনুমতি দিল। কিন্তু মরুভূমিতে চলাকালে পথম উটটিকে কাফেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া সহজ নয়। সবগুলো উটই প্রথমটিকে অনুসরণ করল। কাফেলার পরিচালক তখন লোকটিকে বললো যে, আস্তানায় ফিরে যাওয়ার পর উটটি দেয়া হবে। হযরত উসমানের নিকট খবর দেওয়া হলো যে একটি উটকে কাফেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি, তাই তখন তার নির্দেশ পালন করা হয়নি। খবর শুনে হযরত উসমান (রাঃ) বললেন, হয়ত আল্লাহর ইচ্ছা এই যে, কাফেলার সবগুলো উটই লোকটি পাবে। অতঃপর তিনি কাফেলার পরিচালককে নির্দেশ দিলেন যে, সবগুলো উটই যেন লোকটিকে দিয়ে দেয়া হয়। লোকটি তো বিস্ময়ে অবাক! এতো বড় কৃপণের কি করে এতো বড় দান করা সম্ভব হলো! হতবাক হয়ে সে তার পূর্ববর্তী তিন অভিজ্ঞাতা জানাল এবং দু’প্রকার ব্যবহারের তাৎপর্য কি জানতে চাইল।
হযরত উসমান যে জওয়াব দিলেন তার সারমর্ম এই যে, আল্লাহ বিশ্বের সমস্ত সম্পদের মালিক, মানুষ হলো তত্ত্বাবধানকারী বা পাহারাদার। সে শুধুমাত্র আল্লাহর ইচ্ছানুসারে সম্পদ নিজের জন্য এবং সমাজের অপরাপর ব্যক্তির কল্যাণের জন্য ব্যয় করতে পারবে। মানুষের কাজ হল আল্লাহর সম্পদ নিজের মর্জিমত রক্ষণাবেক্ষণ করা। যদি কোনো ব্যক্তির তত্ত্বাবধানকালে কোনো সম্পদের এক কণামাত্র বিনষ্ট হয় তবে তার জন্য আল্লাহর আছে জওয়াবদিহি করতে হবে। সম্পদের অধিকার শুধু বিশেষ সুবিধা নয়, বরং একটি বিরাট দায়িত্ব।
শিক্ষা ঃ মুমিনকে অবশ্যই দানশীল হতে হবে, কিন্তু সে কখনো অপচয়কারী ও অপব্যয়কারী হতে পারবে না। কেননা “অপচয় ও অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই।”