নেতিবাচকের ইতিবাচক : শামীম সুফী

0
1330
নেতিবাচকের ইতিবাচক

লাড্ডুর নানা ভাই পালোয়ান ছিলেন। তিনি এক চড়ে দুইটা করে দাঁত ফেলতে পারতেন (অবশ্যই অন্যের)। এই গুণ খানিকটা লাড্ডুর আম্মুও পেয়েছেন। নেহায়েত মেয়ে বলে হয়তো তার থাপ্পড়ে লাড্ডুর দাঁত খুলে পড়ে যায় না। কিন্তু উপর এবং নীচ দুই চোয়ালেই যে বেশ একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয় সেটা লাড্ডু প্রতিবার চড় খাওয়ার পরেই বুঝতে পারে। হয়তো চড় খেয়ে খেয়ে ধীরে ধীরে লাড্ডুর দাঁতের গোড়া আলগা হচ্ছে। কোনো একদিন ঝুপঝাপ পড়া শুরু করবে। সেদিন হয়তো এক চড়েই সাতটা দাঁত পড়ে যাবে। লাড্ডু পারমানেন্টলি ফোকলা হয়ে যাবে। শখ করে লাড্ডু কিংবা রসগোল্লা কোনোটাই আর খাওয়া হবে না। এই ভয়েই লাড্ডু এখন যতটা পারে তার আম্মুর চড় বাঁচিয়ে চলে।

লাড্ডুর আম্মু যেমন চড় বিশারদ, কারণ কিংবা অকারণে ঠাস-ঠুস বসিয়ে দিচ্ছেন, লাড্ডুর আব্বু তেমনটাই গোবেচারা ভাল মানুষ। তিনি প্রায় কখনোই রাগেন না এবং লাড্ডুর সব কথাতেই রাজী হয়ে যান। এ কারণে ঝড়-ঝাপ্টা সামান্য তার ওপর দিয়েও যায়। কিন্তু সেটা তিনি বিশেষ গায়ে মাখেন না।

ঠিক হয়েছে হাবিবের নেতৃত্বে লাড্ডুরা তিন বন্ধু ২৪ ঘন্টা তাদের ঘোরতর শত্রু এবং ক্লাসমেট রাখুকে কড়া পাহারায় রাখবে যেন রাখু তাদের নতুন উদ্ভাবিত যন্ত্রটা বিজ্ঞান মেলা থেকে কোনো কায়দায় হাতিয়ে নিতে না পারে। লাড্ডুর ওপর দায়িত্ব পড়েছে রাতের বেলাটা নিজেদের ছাদের ওপর থেকে রাখুর বাসার ওপর নজর রাখার। লাড্ডুর বাসা রাখুর বাসার সামনেই।
কাজটা করার জন্য লাড্ডুকে চড় বাঁচিয়ে রাতে ছাদে থাকার অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে আম্মুর কাছ থেকে। আড়াল থেকে লাড্ডু তার আম্মুর ওপর নজর রাখল পাঁচ মিনিট। বোঝার চেষ্টা করল মেজাজ কেমন। মনে মনে ঠিক করে নিল আম্মুকে সে কি বলবে।
বিকেলের দিকে সাধারণত আম্মুর মেজাজ ভাল থাকে। সন্ধার পর থেকে সেটা খারাপ হতে শুরু করে। এখন বাজছে রাত আটটা। বড়ই বিপদজনক সময়। তবে দূর থেকে দেখে আম্মুকে এখন ততটা বিপদজনক মনে হচ্ছে না। একমনে তিনি উলের একটা সোয়েটার বুনছেন। একবার আয়াতুল কুরসি পড়ে নিয়ে লাড্ডু তার আম্মুর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মুখ তুলে তাকিয়ে ¯ স্নেহমাখা স্বরে আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, কি রে লাড্ডু? খিদে পেয়েছে?
লাড্ডু মাথা নাড়ল, না তার খিদে পায়নি। বলল, সে হোমওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং করতে চায়। বিজ্ঞান সার রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে সপ্তর্ষি মন্ডলের ছবি আঁকতে দিলেও সে ঘরে বসেই কাজটা করতে চায়। এখন তার দরকার সপ্তর্ষি মন্ডলের একটা ছবি। ইত্যাদি ইত্যাদি।

ফলাফল হল অভাবনীয়। লাড্ডুর আম্মু তাহেরুন্নিসা বেগম ভয়াবহ রেগে গেলেন এবং রেগে গিয়ে চড় কষালেন। লাড্ডু তৈরীই ছিল। শা করে সে পিছন দিকে সরে গেল। তাহেরুন্নিসা বেগমের চড়টা লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। লাড্ডু মেকি আতঙ্কের ভাব করে বলল, যাচ্ছি মা যাচ্ছি। ছাদেই যাচ্ছি। উফ একটু পড়া ফাঁকি দেব, তারও কোন উপায় নেই। শুধু তো এখনই নয় আবার রাত বারোটার পরেও যেতে হবে। তখন নাকি পরিষ্কার প্রতিচিত্রটা পাওয়া যায়। উফ! যত্তোসব পড়াশোনা।
লাড্ডু খাতা পেন্সিল এবং ড্রয়িং বাক্স নিয়ে ছাদে চলে এল। ছাদ থেকে রাখুদের বাসার সামনের এবং পেছনের দিকটার সাইড ভিউ পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায়। শুধু উত্তর দিকটা দেখা যায় না। তবে উত্তর দিকে রয়েছে বড় একটা পুকুর। ওদিক দিয়ে পাঁচিল টপকালে রাখুকে পুকুরে নামতে হবে। শতকরা ৯৯ ভাগ সম্ভাবনা রাখু সেটি করবে না।
লাড্ডু পজিশন নিল। রাখুর বাসার দিকে চোখ রাখতে রাখতে ফলস কিছু আঁকা দিতে হবে। নচেৎ আম্মু যদি হঠাৎ তার ছেলের বিজ্ঞান প্রতিভা পরিদর্শনে আসেন, তাহলে গাফিলতির কারণে আরো কয়েকটা রাম চড় খেতে হতে পারে।
এখন কাজ হল নজর রাখা। এর আগেও একবার নজর রাখার দায়িত্ব লাড্ডু পেয়েছিল। তবে সেটা ছিল দিনের বেলার ঘটনা। আর সেটা এমন কোনো কঠিন বিষয়ও ছিল না। শুধু বিজ্ঞান প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে নিজেদের ইচ্ছেমত রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে নতুন কোনো যৌগ উৎপাদন করা যায় কিনা সেটা দল বেঁধে পরীক্ষা করার সময় বিজ্ঞান সার আসছেন কিনা, কিংবা রওনা হলেও কতদূর আছেন, সে বিষয়টি তদারকির ভার ছিল লাড্ডুর ওপর। লাড্ডু তার কাজটা ভাল মতোই করেছিল, কিন্তু হাবিবের নেতৃত্বে ল্যাবে কর্মরত নব্য বিজ্ঞানীরা তাদের কাজ গুবলেট করে ফেলেছিল। একটা লাল তরলের সাথে আরেকটা নীল তরল মিশিয়ে হলুদ রঙয়ের কোনো কিছু উৎপাদনের চেষ্টা করতে গিয়ে ল্যাবরেটরিতে একটা ছোটখাট বিস্ফোরণ ঘটেছিল। আর যাবে কোথায়?

হেডসার পুরো গ্রুপটাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং প্রত্যেকের অভিভাবককে তলব করেছিলেন। অভিভাবকদের গ্রেফতারী পরোয়ানা পিয়নকে ভুজুং-ভাজাং দিয়ে কোনো রকমে বাতিল করা গিয়েছিল, কিন্তু জরিমানার পাঁচটি হাজার টাকা মাফ পাওয়া যায়নি। গ্রুপের সদস্য বাপীর বাবা বিরাট ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট। সে এক শর্তে সবার পক্ষে একাই জরিমানার টাকাটা দিয়েছিল। শর্তটা ছিল- প্রত্যেককে তিন মাসের মধ্যে তার জন্য তিনটা কাজ করে দিতে হবে। পাঁচ হাজার টাকা তখন লাড্ডুদের কাছে এমন বিষম ব্যাপার ছিল যে আগে পিছে না ভেবে হাবিব ছাড়া সবাই রাজী হয়ে গিয়েছিল। শুধু হাবিব বলেছিল-আমার সাথে চালাকির চেষ্টা করিস না, খুন হয়ে যাবি। বাপী হাবিবকে যথেষ্ট ভয় পায়। হাবিবের জন্য শেষমেষ সে শর্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।

হাঙামা মেটবার সপ্তাহখানেক পর লাড্ডুরা টের পাওয়া শুরু করল ঋণের শর্ত কত প্রকার ও কি কি। বাপীর বাবা যেমন বড়লোক, তেমন নিষ্ঠাবান। নিষ্ঠা শেখানোর জন্য তিনি ঘরের প্রায় সব কাজ ছেলেকে দিয়ে করান। যারা কাজের লোক আছে তারা বসে বসে ঝিমায় আর বাপীর কাজ মনিটর করে এবং তার বাবার কাছে রিপোর্ট দেয়। লাড্ডুর প্রথম কাজ ছিল কাজের লোকদের লুকিয়ে বাপীর পক্ষে বাপীদের বাসার সব নোংরা বাথরুম পরিষ্কার করা। দ্বিতীয় কাজ ছিল বাপীদের বাগানের প্রায় এক বিঘা শক্ত মাটির জমি কুপিয়ে নরম করা। তৃতীয় কাজ ছিল… থাক আর নাইবা বললাম। এর পর থেকে ঋণ নেবার ব্যাপারে লাড্ডু খুব সতর্ক হয়ে গেছে। কেউ সেধে ঋণ দিতে গেলে, তা ক্ষুদ্র ঋণই হোক, আর বৃহৎ ঋণই হোক, লাড্ডু ঝাটা হাতে তেড়ে যায়।
মাঝখানে রাতের খাবারের জন্য লাড্ডুকে দশ মিনিটের জন্য নীচে নামতে হল। আম্মু কিছুতেই রাত সাড়ে দশটার পর চোখের পাতা খুলে রাখতে পারেন না। আম্মু ঘুমিয়ে পড়ার পর যা-ই ঘটুক ট্যকল দেয়া লাড্ডুর জন্য কোনো ঘটনা না। কেননা লাড্ডুর বাবার মতো এমন কো-অপারেটিভ বাবা দুনিয়াতে আর দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না।
রাত একটা। লাড্ডুর কাছে অপেক্ষার প্রহরগুলো খুব দীর্ঘ মনে হচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা যেন কিছুতেই এগুচ্ছে না। মাঝরাতে সেকেন্ডের কাঁটাগুলো যেন শামুকের চাইতেও কম জোরে চলে। এর মধ্যে আবার নতুন বিপদ শুরু হয়েছে। এতোক্ষণ কোথায় ছিল কে জানে, এখন ঝাঁক বেধে মশারা আক্রমণ শুরু করেছে। একটু পর পরই শরীরের খোলা অংশে বসে কুটুস করে কামড় দিচ্ছে।
লাড্ডু জানে কামড়ায় শুধু স্ত্রী মশারা। তাও রক্ত খাবার জন্য নয়, প্রজননের প্রয়োজনে। এই ঘটনা জানার পর থেকে লাড্ডু মশা মারে না। আহা বেচারা! নিজের ছেলে-মেয়ের জন্য জীবনের কতবড় ঝুঁকি নিচ্ছে! কিন্তু অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, দু-চারটে মশা না মারলে মশারাই তাকে মেরে ফেলবে।
লাড্ডু ঠাস-ঠুস করে দুই-চারটে মশা মেরে মশাদের সতর্ক করে দেবার চেষ্টা করল। প্রাথমিক আঘাতে জীবন ক্ষয়ের পর মশারা একটু পিছিয়ে গেল। তারপর সম্ভবত প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞাতেই একযোগে আবার তারা লাড্ডুকে আক্রমণ করে বসল। দুই-একটা মশা তার নাকের মধ্যে ঢুকবারও চেষ্টা করল। অবস্থা বেগতিক দেখে লাড্ডু ছাদ থেকে নেমে গিয়ে মশা মারার স্প্রে নিয়ে এল। তারপর ভয়ংকর মুখভঙ্গি করে মশাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
যুদ্ধ যখন প্রায় জয়ের পথে, অর্থাৎ মশারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালানোর পথ খুঁজছে ঠিক সেই সময় লাড্ডুর চোখ গেল রাখুদের বাসার পেছন দিকের পাঁচিলের ওপর। চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখা গেল পেছনে ক্রস আঁকা একটা টি-শার্ট পড়ে কেউ একজন রাখুদের বাসার পেছন দিকের পাঁচিলে চড়ে বসার চেষ্টা করছে। লোকটার গড়ন ভাল করে খেয়াল করে দেখল লাড্ডু- ওটা রাখু নয়। চাঁদের অষ্পষ্ট আলোয় লোকটার মুখ খুব বেশি ভাল করে বোঝা না গেলেও লাড্ডু নিশ্চিত হল সে এ পাড়ার কেউ নয়। তার মানে লোকটা চোর। এত রাতে পাঁচিল টপকে বাড়িতে ঢুকছে -লোকটা চোর না হয়ে যায়ই না।

লাড্ডু সঙ্গে সঙ্গে তার বাবার মোবাইল থেকে হাবিবকে ফোন দিল। দ্বিতীয়বার রিং হবার সাথে সাথে হাবিব ফোনটা রিসিভ করল। এদিকের পরিস্থিতি নিচু গলায় হাবিবকে ব্যাখ্যা করে বোঝাল লাড্ডু। চোরের কথা শুনে লাড্ডুকে জরুরী কিছু ইন্সট্রাকশন দিয়ে হাবিব নিজেও ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়ে গেল। ততক্ষণে অবশ্য চোর বাবাজী পাঁচিল টপকে রাখুদের বাড়ির ভেতর সেঁধিয়ে গেছে।
রাখুদের বাড়ির সামনে হাবিব একা পৌঁছাল না। তার সাথে পুরো এক ব্যাটালিয়ান পুলিশ। বাবা পুলিশের এএসপি হওয়ায় এসব ব্যাপারে তার খুব সুবিধা। বাবা জরুরী কাজে ঢাকায় আছেন। মাকে ম্যানেজ করা হাবিবের জন্য মোটেও কোনো কষ্টের কাজ না। আম্মুকে কাবু করার জন্য অনশনের হুমকিই যথেষ্ট। আর যদি কোনোদিন হাবিব রাগ দেখিয়ে এক বেলা না খেয়ে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। ছেলের অনশন ভঙ্গের জন্য মা তখন পারলে পুরো দুনিয়াটাই ছেলের সামনে হাজির করেন।
এতো রাতে তাই বাসা থেকে বের হতে হাবিবকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। বাসা থেকে বের হয়েই হাবিব থানায় গিয়েছিল। থানার ওসি মান্না আংকেল হাবিবকে খুবই স্নেহ করেন। হাবিবের সাথে তিনি এসআই আমজাদসহ এক ভ্যান পুলিশ পাঠিয়ে দিয়েছেন।
রাখুদের বাড়ির সামনেই লাড্ডুর সাথে হাবিবদের দেখা হল। যথাযথ অভিযোজন সহকারে লাড্ডু হাবিব ও এসআই আমজাদকে ঘটনা খুলে বলল।
আমার ঘুম খুব পাতলা। রাতে কয়েকবারই ঘুম ভেঙে যায়। আধাঘন্টা আগে ছাদের ওপর শব্দ শুনে ব্যাপারটা তদন্ত করতে আমি ওপরে আসি। গিয়ে দেখি গাছ থেকে একটা নারকেল খসে ছাদে পড়েছে। সন্দেহজনক আর কিছু চোখে না পড়ায় নেমে ঘুমুতে যাব এমন সময় দেখলাম পিছনে ক্রস আঁকা টি-শার্ট গায়ে একটা লোক পেছনের পাঁচিল টপকে রাখুদের বাসায় ঢুকছে। লোকটাকে আগে কখনো এ পাড়ায় দেখিনি-বলল লাড্ডু।

এসআই আমজাদ সাহেব ঘটনা শুনে বললেন, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে এই মুহূর্তে আমাদের করণীয় কিছু নেই। আমাদের হাতে সার্চ ওয়ারেন্ট নেই। আমরা বাড়ী সার্চ করে চোর ধরতে পারছি না। আবার লোকটা ওদের আত্মীয় কেউ হলে পাঁচিল টপকে বাড়ি ঢুকে হয়তো তেমন কোনো অপরাধ করেনি। তাই আমরা বাড়ির মধ্যে হালুম করে গিয়ে হাজির হতেও পারছি না। এখন আমাদের আড়াল নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। চুরি-টুরি করে চোর যখন বের হবে তখন আমরা তাকে ধরব।

সেটাই ঠিক হল। এস আই আমজাদের নেতৃত্বে পুলিশের দল রাখুদের বাড়িটাকে ঘিরে চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগল। দক্ষিণ কোণে যেখানে অন্ধকার একটু বেশি সেখানে দু’জন কনস্টেবল মাটিতে শুয়ে বন্দুক তাক করে পজেশন নিল। তাদের ভাব দেখে মনে হল তারা যুদ্ধ করতে এসেছে। এসআই আমজাদ সাহেব বাধা দিলেন না। বেচারারা তেমন কোনো ভাল অভিযানে যাবার সুযোগই পায়নি। শুধু থানা পাহারা দিয়েই চাকরি জীবনের প্রায় পুরোটা সময় ব্যয় করে ফেলেছে। এখন চোর ধরতে এসে একটু-আধটু যুদ্ধংদেহী আচরণ করলে তাতে এমন কোনো ক্ষতি নেই।

আরো আধা ঘন্টা পরে চোর বের হল। পিছনের পাঁচিল টপকেই। কাঁধে একটা ঝোলা। তাতে চুরির মাল-সামান। আশ্চর্য, রাখু কিছুই টের পেল না?
এসআই আমজাদের কাছ থেকে সংকেত পাওয়া মাত্রই পাঁচজন কনস্টেবল চোরকে ঘিরে ধরল। বেচারা চোর পুলিশ দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। আর তারপর পিঠের বস্তা ফেলেই পালানোর জন্য দৌড় দিল। সহজ শিকার ভেবে কনস্টেবলরা চোরকে ঘিরে ধরলেও তাদের মধ্যে একটা গা ছাড়া ভাব ছিল। ফলে চোর যখন পালানোর জন্য দৌড় লাগালো, তখন চট করে কেউ আর তাকে ধরতে পারল না। এদিকে চোরকে পালাতে দেখে হাবিব হায় হায় করে উঠে চোরের পিছে পিছে দৌড় লাগালো। ঘটনা বুঝে উঠতে পুরো পুলিশ বাহিনীর আরো পাঁচ সেকেন্ড সময় লেগে গেল। পাঁচ সেকেন্ড পরে পাখি উড়ে গেছে বুঝতে পেরে পুলিশরাও সবাই চোরের পিছে পিছে দৌড় লাগালো। সোজা রাস্তা ধরে বেশ খানিকটা যাওয়ার পরেই ডানে একটা তীক্ষ্নবাঁক। লাড্ডু দেখল বাঁকের আড়ালে প্রথমে চোরটা হারাল। পরে হাবিবও হারাল। ঠিক এই সময় একটা চিৎকারের শব্দ শুনতে পেল লাড্ডু। শব্দ শুনে লাড্ডুর মনে হল চিৎকারটার অর্ধেক হাবিবের এবং বাকি অর্ধেক চোরের। তারমানে বাঁক ঘুরেই চোরটা হয়তো হাবিবের পেটে একটা ছুরি বসিয়ে দিয়েছে। হাবিব যেরকম বিচ্ছু, হয়তো নিজের পেট থেকে সাথে সাথেই ছুরিটা বের করে সে চোরটার পেটে ছুরিটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। এ কারণে দুজনের চিৎকারের অর্ধেকটা করে শোনা গেছে।

হাবিবের জন্য শোকে হায় হায় করে উঠে এবার লাড্ডুও দৌড় লাগাল। বাঁকটার কাছে সে পৌঁছে দেখতে পেল পুলিশ বাহিনী একটা জায়গা গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আহা রে! কোনো সন্দেহ নেই, হাবিব এবং চোর দু’জনেই মরে পড়ে আছে। একটা সম্ভাবনাময় জীবনের কিনা শেষ পর্যন্ত চোরের হাতে মৃত্যু! ডুকরে কেঁদে উঠে লাড্ডু জটলাটার দিকে ছুটে গেল।
গিয়ে যা দেখল তার জন্য লাড্ডু প্রথমেই পৌরসভার গাফিলতিকে ধন্যবাদ দিল, এবং এই প্রথম উপলব্ধি করল ম্যানহোলের ঢাকনি খোলা থাকাটা সব সময় খারাপ ফলদায়ক নয়। যে কোনো নেতিবাচকেরও কিছু ইতিবাচক দিক আছে।
ডান দিকের বাঁকের প্রথমেই ছিল একটা খোলা ম্যানহোল। উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়াতে গিয়ে চোরটা প্রথমে খোলা ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু ম্যানহোলের মুখটা সরু হওয়ায় চোরের কোমর আটকে যায় ম্যানহোলের মুখে। আর তারপর হাবিব তার গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ফলে ব্যথা পেয়ে দু’জনেই চিৎকার করে ওঠে।

চোরটাকে ম্যানহোলের মধ্যে আঁটকে থাকতে এবং হাবিবকে একটু দূরে পড়ে থাকতে দেখে লাড্ডু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
হঠাৎ কনস্টেবল দুজন কেতাবি ঢংয়ে চিৎকার করে উঠল-এই আপনারা ভিড় ছাড়েন। ভিড় ছাড়েন। আমরা গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে আছি…
লাড্ডু তার আশেপাশে চেয়ে একটা তিন ঠ্যাংয়ের খোঁড়া কুকুর আর একটা কাক ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেল না। সে হো হো করে হেসে উঠল।

একটি রিপ্লাই দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.