বন্ধুরা তোমারা কি জানো এখন কি মাস? জৈষ্ঠ মাস, হ্যাঁ জৈষ্ঠ মাসের আরেক নাম হলো মধুমাস। চারদিকে ফলের সুঘ্রাণ। রাস্তার পাশে বাজারে থরে থরে সাজানো থাকে ফলেফলে। মধুমাস বলে বাংলা কোন মাস নেই কিন্তু নানারকম মধুর রসে ভরা রসালো সব ফলের সমাহার এ মাসেই ঘটে কিনা তাই এ মাসকে সবাই মধুমাস বলেই ডাকে! রাজধানীতে বিভিন্ন ফলের মধ্যে থাকে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, জামরুল, লটকন ইত্যাদি। কিছুদিন পরে আরও কিছু ফল বাজারে আসবে, যেমন-আমলকি, পেয়ারা, সফেদা, বেল, কদবেল, আমড়া, ইত্যাদি। বন্ধুরা তোমরা কি জানো, যে মৌসুমে যে ফল, তা সেই মৌসুমের রোগ প্রতিষেধক! মানে হচ্ছে তুমি যদি এখন এই গরমে অসুস্থ হও তাহলে এখন যে যে ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তা খেলেই তুমি সুস্থ হয়ে যাবে! নানারমক ফল খাবো কিন্তু ফলের সম্পর্কে কিছু জানবো না তাই কি হয়, বন্ধুরা? চলো আজ কিছু ফলের ফলাফল জেনে নিই-
আম
আম অপছন্দ করে এমন মানুষ আছে কিনা আমার জানা নেই। তুমিও নিশ্চয়ই আম পছন্দ কর। কাঁচা আম ও পাকা আমের স্বাদ ও মজাই আলাদা। আম-দুধ ভাত, আম চিড়া, আমের মোরব্বা, আমের আচার, কাঁচা ও পাকা উভয় আমের জুস, আম ডাল, আমস্বত্ত (আমসি ) কতকিছুই না হয় এই আম দিয়ে! রসালো আম চুষে খেতে যে কি মজা, তা আর কি বললো তোমাকে। দেখ বন্ধুরা, তবু কেন যে আমাদের দেশে আমকে ফলের রাজা বানানো হলো না তা আমার বুঝে আসেনা। অবশ্য এখন যদি “কে হবে ফলের রাজা”র জন্য ভোট নেয়া হয় তাহলে সবার আগে আমি আমকেই ভোট দিব তুমিও দিও কিন্তু!
কাঁঠাল
আমাদের দেশের জাতীয় ফল, মানে ফলের রাজা হলো, কাঁঠাল। কাঁঠাল দেখতে সজারুর মত কাঁটা কাঁটা হলে কি হবে, এর গুণের কিন্তু শেষ নেই। আমের চেয়ে কোন অংশে কম নয় কাঁঠাল, বরঞ্চ ক্ষেত্রবিশেষে ফলের এই রাজা আমকেও ছাড়িয়ে যায়। কাঁঠালের মুচি ভর্তা বনিয়ে খাওয়া হয় কাঁঠাল বড় হবার আগেই। কাঁচা কাঁঠাল রান্না করে সবজি হিসেবে খাওয়া একটি জনপ্রিয় খাবার, তেমনি পাঁকা কাঁঠালের বিচি রান্না করে খাওয়াও কম জনপ্রিয় নয়। আর ভিটামিনের প্রতিযোগিতায় কাঁঠাল সবফল থেকে এগিয়ে। কমবেশি সকল ভিটামিনই এ রাজার শরীরে অবস্থিত। যদি তোমার শরীরের বর্ণ কাঁঠালের কোষের মত কাঁচা হলুদ করতে চাও তবে টানা একমাস কাঁঠাল খেয়ে দেখ! বিশ্বাস না হলে একমাস আগে ও পরে তোমার ছবি তুলে দেখতে পারো (এটা পরীক্ষিত সত্য)। তাই ভেবনা যে আমকে ভোট দিলেই আম বেটা জিতে যাবে। কেননা কাঁঠাল রাজা হয়েছে তার রূপে নয় গুণে! কাঁঠালের ভোট দাতাও কিন্তু সংখ্যায় কম নয়।
তরমুজ
গ্রীষ্মের শুরু থেকেই বাজারে থরে থরে সাজানো থাকে তরমুজ। বড়সড় এ ফলটি জগতে সবচেয়ে রসিক ফল হিসেবে পরিচিত কারণ এর ৯৭ ভাগই জলীয় অংশ। তাই এ ফল ত্বক ভেজা রাখে। আর অনেক ফল বিশেষজ্ঞ তরমুজকে লাজুক ফল বলে। অতিমাত্রায় লাজুক হবার কারণেই নাকি এদের সকল প্রজাতিকেই কাটার পর ভেতরে লাল হয়ে থাকতে দেখা যায়!
তরমুজ ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল। গরমে ক্রমাগত ঘাম হওয়ার জন্য যে জলীয় অংশ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তা পূরণ করতে সাহায্য করে তরমুজ। এছাড়াও তরমুজের প্রতিটি টুকরো তোমার রক্তচাপ হ্রাস করবে, কোলেস্টেরল কমাবে এবং ধমনীকে পরিষ্কার করবে। তরমুজের বিচি দিয়ে কিন্তু সুন্দর মালাও বানানো যায়। প্রজা হিসেবে রসিক তরমুজের অবস্থান প্রথম কাতারে।
আনারস
আনারস একটি অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্বাদু ফল হিসেবে আমাদের দেশে পরিচিত। এতে প্রচুর ভিটামিন এ, বি ও সি থাকে। এটি একটি স্বল্পমেয়াদি ফল। সহজলভ্য ও স্বল্পদামী এ ফলের অনেক গুণ রয়েছে। সর্দি কাশি ও জ্বর হলে আনারস খেলে উপকার হয় এবং জ্বরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনে। বাংলাদেশে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন আনারস উৎপাদিত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানিযোগ্য ফল হিসেবে প্রজা আনারস দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
লিচু
গাছের মাঝে ঝুলে থাকা থোকায় থোকায় এ ফলকে কেউ বা ফুল ভেবে বসবে। ফুলের মতই দেখতে সুন্দর আর জুটিবদ্ধ লিচু একটি উৎকৃষ্ট ফল। দেখতে পিচ্চি এফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ, তাই বন্ধুরা দাম একটু বেশি হলেও যতটা সামর্থ্যে কুলায় খাওয়া উচিত। এ সময়ে স্কুলের টিফিনে তোমরা ভাজি আর ফাস্টফুডটা না খেয়ে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারো ছোট এই ফল। রসে টইটুম্বর এই ফলটির স্থায়ীত্ব খুব বেশি সময় নয়। স্বল্পমেয়াদি হলেও সুস্বাদু ফল হিসেবে এর জনপ্রিয়তা অনেক। সাইজে ছোট এ প্রজা লিচুকে তোমরা খুব বেশি পছন্দ করো তাইনা বন্ধুরা, আমিও! ফুরিয়ে যাবার আগেই এ বছর এর স্বাদ গ্রহণ করতে ভুলনা কিন্তু।