ঘটনাটা ১৯৯৯ সালের। আমাদের অবস্থা ভালো ছিল না। চৈত্র মাসে আমি হেঁটে স্কুলে যাচ্ছিলাম প্রায় ৫ কি:মি দূরে আমার স্কুল। তখন বেলা ১২ টা আমরা তিন বান্ধবী কথা বলতে বলতে স্কুলে এসেছিলাম। পিটির সময় দেখতে পেলাম আমার এক বান্ধবীকে পিটির ম্যাডাম রোদ্দুরের মাঝে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। তার আসতে দেরি হয়েছিল আর স্কুলের জুতা পড়া ছিলনা বলে। দুপুরের দিকে যখন আমাদের ছুটি হলো আমরা আবারও হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি যাচ্ছিলাম কিন্তু গরমে শরীর থেকে সবার দরদর করে ঘাম ঝরছিল। অবশেষে চাঁদা তুলে তিনজন মিলে রিকশা করে বাড়ি গেলাম। পরের দিন আমি ভুল করে সাদা ফিতা দিয়ে চুল না বেঁধে লাল ফিতা দিয়ে মাথার উপরে ঝুটি করেছিলাম, এ কারণে ম্যাডাম আমাকে কাঠফাটা রোদের মাঝে দাঁড় করিয়ে দিলেন। প্রচন্ড রোদে তৃষ্ণায় গরমে ক্লান্ত হয়ে কখন আমি ফিট হয়ে পড়ে গিয়েছিলাম তা আমার মনে নেই। ম্যাডাম তাড়াতাড়ি আমাকে অফিস রুমে ফ্যানের নিচে শুইয়ে দিলেন। আমার বান্ধবী নাজ আমার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো।
স্যার আমাকে ঠান্ডা ডাব দিতে বললেন পিয়নকে। পিয়ন তাড়াতাড়ি ডাব নিয়ে এসেছিল। আমি বার বার পানি পানি বলেছিলাম। নাজ আমার জন্য পানি আনতে গিয়ে দেখে পানি নাই। ক্লাসে সবার পানি গরমের কারণে খেয়ে ফেলেছিল। তারপরে ম্যাডাম পিয়নকে টাকা দিয়ে দোকান থেকে ঠান্ডা পানি এনেছিল। পানি খেয়ে আমার মনে হল আমি নতুন জীবন পেলাম।
সেই দিনের পর থেকে ম্যাডাম আর কোন ছাত্র-ছাত্রীকে রোদের মাঝে দাঁড় করিয়ে রাখেননি।
সবাই আমাকে বলে তুই আর আগে কেন ফিট হলি না তাহলে আমাদের এভাবে রোদ্দের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না।