শিশু-কিশোরদের প্রিয় পত্রিকা ‘কচিপাতা’ ম্যাগাজিনের ১ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণিল আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় গত ১১মে ২০১৮, শুক্রবার, বিকাল ৪.০০টায় জাতীয় প্রেসক্লাব, কনফারেন্স লাউঞ্জ-৩, ঢাকায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তেজগাঁও কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আঞ্জুমান আরা। প্রধান অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম (শাহানা রব্বানী)।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ও কবি আবদুল মুকীত চৌধুরী, ছড়াকার মহিউদ্দিন আকবর, শিশু সাহিত্যিক শামীমা জাফরিন, প্রকাশক-সাংবাদিক সাইফুল ফারুকী, ‘পাগলের বন্ধু’ খ্যাত ব্যাংকার শামীম আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘কচিপাতা’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক আলেয়া বেগম আলো।আরও বক্তব্য রাখেন প্রফেসর জেড এফ লিমি চৌধুরী, ফকিরেরপুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জাতীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক (১৯৯৬) পিয়ারা আক্তার, অল এবাউট দ্যা চিলড্রেন এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মনজুর ইমাম।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন ছড়াকার মানসুর মুজাম্মিল ও জাইমা নাহিয়ান খন্দকার। প্যারেন্টিং এর উপর প্রেজেন্টেশন প্রর্দশন ও আলোচনা করেন ‘কচিপাতা’ ম্যাগাজিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জনাব আকাশ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “ঝরা ফুল” এর আহবায়ক-আরিফ আহসান উল্লাহ, সদস্য সচিব-ফয়সাল মাহমুদ, অর্থ সচিব-মাহমুদুল হাসান নাজমুল, তথ্য সচিব-মোহনা ও আশরাফুল সিয়াম, সদস্য-তৌফিক এলাহী নাঈম। আলোকচিত্রে ছিল কচিপাতার আলোকচিত্রী খন্দকার আকতার হোসেন ও সৈয়দ মেহেদী হাসান। ভিডিও ধারন এ ছিলেন কচিপাতার প্রতিবেদক মারুফ মুন্না। ভলান্টিয়ার হিসেবে আন্তরিকভাবে পরিশ্রম করেন শাখাওয়াত বিন সাইদ। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন কচিপাতার আসাদুজ্জামান ও ফারভেজ হোসেন।
শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত- এর মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটিতে গীতিকার আবদুল মুকীত চৌধুরীর কথায় ও সুরকার মিলটন খন্দকারের সুরে এবং জুবায়ের লিটনের পরিচালনায় ‘কচিপাতা’ ম্যাগাজিনের থিমসং এবং আরো একটি শিশু সঙ্গীত পরিবেশন করে কচিপাতা’র ক্ষুদে শিল্পীরা।
বিশিষ্টি জনের বক্তব্যের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ ও মানবিকতা নিয়ে আবেগময় প্রেজেন্টেশন পরিবেশন করেন ব্যাংকার শামীম আহমেদ। প্যারেন্টিং এর উপর একটি প্রেজেন্টেশন পরিবেশন করেন আকাশ আহমেদ। মোড়ক উন্মোচন করা হয় কচিপাতা’র প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা ২০১৮।
শিশু-কিশোরদের ছড়া ও কবিতা পরিবেশনের পর বিশেষ অতিথির বক্তব্য শেষে অতিথিবৃন্দ ৪ জন ক্ষুদে লেখককে সম্মাননা স্মারক এবং ৪টি বিদ্যালয়ে অুনষ্ঠিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ৫৫ জন শিশু-কিশোরকে পুরস্কার ও সার্টিফিকেট প্রদান করে। বিদ্যালয়গুলো হলো নিধুস্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফকিরেরপুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুনাক এর চিত্রাংকন স্কুল রংতুলি ও ঢাকা ইউনাইটেড স্কুল।
‘নৈতিকতা, মানবিকতা, সৃজনশীলতা এক সুতোয় হোক গাঁথা’ ব্যানার সংবলিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শামছুন্নাহার বেগম (শাহানা রব্বানী) সকলের উদ্দেশ্যে বলেন- “আমরা যদি দেশকে ভালোবাসি তাহলে আমাদেরকে আমাদের সন্তানদেরকে দেশমাতৃকার ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নৈতিকতাপূর্ণ নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আকবর দাদুমনি ছোটদেরকে তিনটি রাজনীতি করার পরামর্শ দিয়ে বলেন- “আমরা ছোটরা তিনটি রাজনীতি করবো। এক. সবসময় সত্য কথা বলবো। দুই. মা-বাবার কথামত চলবো। তিন. সময়মতো লেখাপড়া করবো।” তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন- “আমরা সবসময় আমাদের সন্তানদেরকে নিয়ে উপরের দিকে চিন্তা-চেষ্টা করবো। আমাদের দেশের আগামীর কর্ণধার আজ এখানে বসে আছে। এখান থেকেই হয়তো কোন শিশু একদিন সারা পৃথিবী জয় করবে। বিশ্বব্যাপি তাকে সম্মাননা দেয়া হবে। সংবর্ধনা দেয়া হবে।” তিনি শিশুদের গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর আঞ্জুমান আরা বলেন- “সন্তান যেমন তার পিতামাতার প্রতি আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে তেমনি পিতামাতা ও তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন।” তিনি আরো বলেন- “যখনি আমার সন্তান কাদামাটি তখনি তাকে গড়ে নিতে হবে নিজের স্বপ্নের মত করে।”
সবশেষে সভাপতির বক্তব্য ও উপস্থিত সকলকে আপ্যায়ন এবং আনন্দ উৎসব বিনিময়ের মাধ্যমে শেষ হয় ‘কচিপাতা’ ম্যাগাজিনের ১ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণিল উদযাপন।
‘কচিপাতা’ শিশু-কিশোরদের নিয়ে আর্ট পেপারে মুদ্রিত রঙিন ব্যয়বহুল একটি ম্যাগাজিন। সাইজ ৮.৫ ও ১১.২৫ ইঞ্চি। শিশুদের সৃজনশীল মেধার চর্চা এবং বিকাশ এর মুখপত্র হিসেবেই ‘কচিপাতা’ নামে মাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়ে আসছে। সারা দেশের এবং দেশের বাইরের শিশু-কিশোর, নবীণ ও প্রবীণ লেখকদের লেখা, পাঠানো ছবি, শিশু বিষয়ক নানা তথ্য, প্রতিবেদন এখানে প্রকাশ পেয়ে থাকে। কচিপাতা স্কুল পর্যায়ে শিশুদেরকে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ডের সাথে বিশেষ করে পথশিশু, অসহায় মানুষকে নিয়ে যারা কাজ করে তাদের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে।
সম্মাননা দেয়া হয় যাদের :
০১. ক্ষুদে লেখক ফারিন লাবিবাহ্।
প্রথমেই ১১ বছর বয়সী ক্ষুদে লেখক ফারিন লাবিবাহ্ কে দেয়া হয় একটি সম্মাননা স্মারক। লাববিাহ্র বাবা মারা যায় হার্ট এটাকে। বাবার প্রতি কষ্ট ভালোবাসাকে লিপিবব্ধ করে নিয়মিত তার ডায়রিতে। ডায়রিটি সে লুকিয়ে রাখে। একসময় মায়ের হাতে পড়ে ডায়রিটি। তারপর প্রকাশকের সাথে কথা বলে উদ্যোগ নেয়া হয় বই প্রকাশের। প্রকাশক মামুন সুলতান কৃর্তক প্রাকৃত প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয় ‘বাবা’ নামের বইটি। স্থান পায় সিলেট ও ঢাকার বইমেলা ২০১৮ তে। বইটির প্রচ্ছদ করেন মামুন হোসাইন। লাবিবাহ্’র আলোকিত জীবনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বক্তারা।
০২. ক্ষুদে লেখক রানিজা আরা মৌ
রানিজা আরা মৌ ভারতেশ্বরী হোমস এ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ২০১৭ সালে বইমেলায় ‘প্রজাপতি’ নামে একটি ছড়ার বই প্রকাশিত হয় রানিজা আরা মৌ এর। ২০১৮ সালে বইমেলায় রানিজার ২য় বই ‘সেই পরী’ প্রকাশিত হয়। দুটি বই প্রকাশিত হয় পাতা প্রকাশনী থেকে। বই দুটির প্রচ্ছদ করেন আলেয়া বেগম আলো।
০৩.তাওসিফ তাহমিদ নীল। ১ম শ্রেণির ছাত্র নীল ৬ বছর বয়সী তার ১ম লেখা প্রকাশিত হয় কচিপাতা ম্যাগাজিনে।
০৪. ১২ বছর বয়সী ক্ষুদে লেখক সৈয়দ অনন্ত মুহাম্মদকে দেয়া হয় সম্মাননা।কচিপাতা ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়।
০৫. কিশোর প্রচ্ছদ শিল্পী সৈয়দ তূর্য মুহাম্মদ অংকনকে দেয়া হয় সম্মাননা। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে ঘুড়ি নামের একটি বইয়ের প্রচ্ছদ করে সে। তখন তার বয়স ছিল ১৪ বছর।
০৬. পাগলের বন্ধু খ্যাত ব্যাংকার শামীম আহমেদ কে দেয়া হয় সম্মাননা স্মারক। উল্লেখ্য ব্যাংকার শামীম আহমেদ পথে পড়ে থাকা অসহায় সম্বলহীন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে তুলে এনে হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেন। তারপর তাদের বাড়ীঘর খুঁজে সেখানে পৌঁছে দেন অথবা পূণর্বাসন করেন। ইতিমধ্যে তিনি ৭ জন পাগল নারীকে সুস্থ করে তোলার কাজটি সম্পন্ন্ করেন। ২০১৫ সালে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ইত্যাদিতে ওনার এই কাজটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেটি প্রদর্শন করা হয় কচিপাতার প্রতিষ্ঠাবার্র্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে।
০৭. যে চারটি স্কুলে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকদেও দেয়া হয় সম্মাননা। তারা হলেন নিধুস্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা পারভীন, ফকিরেরপুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিয়ারা আকতার, পুনাক এর চিত্রাংকন বিভাগ রংতুলির শিক্ষক ইমদাদুল হোসেন ফারুক, আকৃতি আর্ট একাডেমির শিক্ষক দিপংকর সরকার।
০৮. সেচ্ছাসেবী সংগঠন ঝরা ফুলকে দেয়া হয় সম্মাননা।
০৯. শিশু সংগঠক ও সিনিয়র আলোকচিত্রী মহসিন আহমেদ কে দেয়া হয় সম্মাননা।
১০. আলোকচিত্রী খন্দকার আকতার হোসেনকে দেয়া হয় সম্মাননা
যাদের দেয়া বই উপহার হিসেবে দেয়া হয় শিশূদের মাঝে তারা হলেন কবি আবদুল মুকিত চৌধুরী, রহিমা আক্তার মৌ, মুক্তদের প্রকাশনের প্রকাশক ইমন মজুমদার প্রদত্ত বই, জুবাইর জসিম, মির্জা নূরুন্নবী, রিফাত আরা শাহানা, পাতা প্রকাশনী প্রদত্ত বই।
অনুষ্ঠানটির জন্য আরো যাদের প্রতি কৃতজ্ঞ কচিপাতা ম্যাগাজিন তারা হলেন কবি শামীম পারভেজ যিনি ঢাকার বাইরে থাকায় রওনা দিয়েও পথে বিলম্বের কারণে এসে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার সময় উপস্থিত ছিলেন। ইমদাদুল হক ফারুক যিনি পুনাক এর চিত্রাঙ্কন শিক্ষক, মিলনায়তনের অঙ্গসজ্জায় কাজ করেছেন ছবিতে যে পাতাগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো তৈরি করে এনেছেন এবং মিলনায়তন সাজানোতে সহযোগিতা করেছেন তিনি। মিলনায়তনটির সাজসজ্জায় আরো যারা কাজ করেছেন তারা হলেন ছড়াকার মানসুর মুজাম্মিল, শিশু সংগঠক ও কচিপাতার আলোকচিত্র সম্পাদক মহসিন আহমেদ, ইসমাইল হোসেন, ঝরা ফুল এর সেচ্ছসেবী আরিফ আহসানুল্লাহ (বিদ্যুৎ), ফয়সাল মাহমুদ, মাহমুদুল হাসান নাজমুল, আশরাফুল সিয়াম, মোহনা জাহ্নবী, তৌফিক এলাহী নাইম, জান্নাতুল ফেরদৌস আলো। এছাড়াও কাছে দুরে বিভিন্ন জায়গা থেকে আরো অনেকই যারা সহযোগিতা করেছেন শুভকামনা করেছেন তাঁদরে সবার প্রতি রইল কচিপাতা ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা।