মঞ্চায়ন হলো বাংলাদেশ থিয়েটারের নাটক ‘সী-মোরগ’ এর ২৯৩ তম প্রদর্শনী। কচিপাতা

0
538
সী-মোরগ
গত ২৪নভেম্বর, বুধবার জাতীয় নাট্যশালায় শুরু হয় বাংলাদেশ থিয়েটারের ৩৫ বছর পূর্তি উৎসব। ঐদিন সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ঢোলবাদ্যির তালে তালে নীলাকাশে রংবেরঙের বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নাট্যব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ দেবনাথসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। তিন দিনের উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নাটকের পাশাপাশি বিকেল চারটা থেকে মুক্তমঞ্চে পরিবেশিত হয় নাটক, নৃত্য, গান ও আবৃত্তি। গতকাল শুক্রবার সন্ধায় উৎসবের শেষ দিন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় দলটির দর্শকনন্দিত নাটক ‘সী-মোরগ’ এর ২৯৩ তম প্রদর্শনী ।
সী-মোরগ
আসাদুল্লাহ ফারাজী রচিত এই নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন হুমায়ুন কবীর হিমু। প্রাচীনকালে অশ্বমেধ যজ্ঞের প্রচলন বহুল চর্চিত এবং লোকশ্রুত। রাজা তার সাম্রাজ্য নির্ধারণে পোষ্য ঘোড়া সজ্জিত করে ছেড়ে দেয়। ঘোড়া অপরাপর রাজ্য সীমানা অতিক্রম করলে হয় অপর রাজ্যের রাজা তাকে আদরে আপ্যায়নে খাইয়ে-দাইয়ে ঐ রাজার বীরত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে। নচেৎ ঘোড়াকে আটকিয়ে রাখার মতো ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে ঐ রাজার সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। অর্থাৎ ঘোড়া এখানে সাম্রাজ্য বিস্তার এবং দখলদারিত্ব প্রকাশের হাতিয়ার। অনেকটা সেভাবে সিলেটের পাহাড়ী জঙ্গল থেকে কুড়িয়ে পাওয়া, বাঘাবাড়ী গ্রামের জোতদার শিকদারের পোষ্য সী-মোরগের প্রতি ভালবাসা এবং সী-মোরগের নিরুদ্দশার সুবাধে জোতদার শিকদারের দখল দারিত্বের মানসিকতার নাটক ‘সী-মোরগ’। জীবনের কোলাহলে তিন স্ত্রী, চার চাকর আর প্রাণপ্রিয় ‘সী-মোরগ’ নিয়ে একরকম সুখের আবহে জীবন কাটাচ্ছিলেন জোতদার শিকদার। জলের নিম্নগামিতার মতো নিম্ন বয়সী স্ত্রীর প্রতি তার অধিক ভালবাসা, চাকরদের পিঠে কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া তার মনিবনা আর হৃষ্টপুষ্ট সী মোরগের ঝুটি-পালক ছুঁয়ে সৌন্দর্যের অনুরাগ প্রকাশ তার উপার্জিত সম্পদের প্রতি সম্মাননা।
সী-মোরগ
তথাপি পিতা-মাতার ভালবাসার অর্থপূর্ণতায় তার জন্ম হলেও বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় বাবার মৃত্যু যেমন লোক সমাজে তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তেমনি হঠাৎ সী-মোরগের নিরুদ্দশায় পাগলা বাবার কুমন্ত্রণা তাকে প্রতিটি সম্পর্কের ব্যাপারে শঙ্কিত করে তোলে। স্ত্রীদের প্রতি তার অবহেলাকে বড় না করে দেখে, সে ভাবে স্ত্রীরা বুঝি অন্য কোথাও আসক্ত। চাকররা ‘সী মোরগ’ খুঁজে না পেলে, সে ভাবে চাকররাই বুঝি মোরগটাকে খেয়েছে বুভুক্ষের মতো। কুড়ি- পাড়ার এক হিন্দু বাড়ির পাশে মোরগের পশম পেয়ে ঐ হিন্দুর সহায়-সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে সে উন্মত্ত।
প্রতিটি চরিত্রের সাইকোলজি ধরতে যথোপযুক্ত অভিনেতা অভিনেত্রীর নির্বাচন এবং প্রশিক্ষণ নয়নাভিরাম। জীবনের ভাসমানতার তলের গহিনের সংলাপ ও অদৃশ্যমানতা ফুটিয়ে তুলতে মাঝে মাঝে আলোর জোন বিভাগ তীক্ষ্ণ ও তীব্র। পাগলা বাবা হয়ে রফিক উল্যাহ’র অভিনয়,আখতার ঘটকালিতে অনুকরণীয় ঘটকের প্রতিফলন, হিন্দু পরিবারের দুই ভাই ইমন খান ও রাজা এককে অসহায় কিন্তু সকলের সঙ্গে একত্রিত হয়ে সহায়। মাসুদা বড়বিবি চরিত্রে স্বামীর অনন্যা অনুগত, রিতার মেঝ বিবি চরিত্রে প্রতিবাদী এবং সুমী ছোট বিবি চরিত্রে কৌশলী। সতীনের ঝগড়া বিলাপ-প্রলাপ না হয়ে বরং আজিজ রেজা, মজিবুর রহমান বাবু,সুমন,রাতুল, মোস্তাফিজ, সৈকত,খালিদ মাহমুদ সাওন,দর্পন,আজহার আজুদের সমন্বয়ে সকলের অভিনয় ও সংলাপ শৈল্পিক রুপে উত্তীর্ণ হয়ে ওঠে। এ ছাড়াও সমাপনী আয়োজনে ছিলো আনন্দ শোভাযাত্রা ও মঞ্চমেলা।
সী-মোরগ

একটি রিপ্লাই দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.