সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে গেলে পায়ের হাড়ে জোর পাচ্ছেন না অনেকদিন ধরেই। আবার চলাফেরা করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই পড়েও গেছেন একাধিকবার! অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরেসিস-সহ আরও নানা অসুখের সম্ভাবনা মাথায় এলেও ভিটামিন ডি-র অভাবের কথা আর মাথায় আসছে না!
ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রথম জানতে পারলেন, ভিটামিনের অভাবেও হাড় দূর্বল হয়ে যেতে পারে! আসলে ভিটামিন ডি আর ক্যালশিয়ামের কার্যকারিতা একে অপরের সঙ্গে জড়িত। ফলে একটির অভাবে আর একটিও ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।
এছাড়া রোজকার লাইফস্টাইল হ্যাবিটস তো আছেই। সবমিলিয়ে ভিটামিন ডি-র অভাব ডেকে আনতে পারে নানা সমস্যা। সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সমস্যা ও সমাধান
ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। হাড় ভাল রাখতে ক্যালশিয়ামের প্রয়োজন। আর শরীরে ক্যালশিয়াম অ্যাবজর্বশনের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন। ভিটামিন ডি-র অভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওম্যালেশিয়া হতে পারে। এটির ফলে হাড়ের গঠনে ডিফর্মেশন দেখা দেয়। ভিটামিন ডি-র অভাবের জন্য আমাদের জীবনযাপনজনিত অভ্যেসও দায়ী।
দুধ কম খাওয়া বা শরীরে রোদ না লাগানো বা এয়ারকন্ডিশনড গাড়িতে যাতায়াত করা বা ঠান্ডা ঘরে সারাদিন বসে থাকার ফলে এরকম হতে পারে। বয়স্ক মানুষেরা শীতকালে একেবারেই বাইরে না বেরোলে তাদেরও ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা দিতে পারে ব্যাপকহারে।
তবে দুপুরবেলা কাঠফাটা রোদে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। বরং সকালের হালকা রোদে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকুন। ভিটামিন ডি-র অভাবের মূল লক্ষণ হল হাড় নরম হয়ে যাওয়া। এই অসুখের রোগীরা বারবার পড়ে যান ও হাড় ভেঙে যায়। যাদের গায়ের রং খুব কালো বা পিগমেন্টেশন বেশি তাদের শরীরে সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ঢুকতে বাধা পায়। এরা রিস্ক জোনে আছেন।
আবার এটি যেহেতু ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন, তাই ওবিসিটির ফলে ভিটামিন ডি-র অভাব হতে পারে। সিরোসিস অফ লিভার বা কিডনির কিছু অসুখে এই ভিটামিনের অভাব হতে পারে। এরকম কিছু লক্ষণ থাকলে ডাক্তারেরা অনেকসময় ভিটামিন ডি এস্টিমেশন করতে বলেন। কিন্তু এই পরীক্ষা যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। মনে রাখা দরকার, ভিটামিন ডি-র অভাব হলে সাপ্লিমেন্ট খেলে সবসময় লাভ হয় না। যেহেতু এটি ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন, তাই না বুঝে বেশি সাপ্লিমেন্ট খেলে ভিটামিন টক্সিসিটি হতে পারে। অবস্থা গুরুতর হলে রোগী আইসিইউ-তেও পৌঁছে যেতে পারেন।
অস্টিওপোরেসিসের চিকিৎসায় ক্যালশিয়াম কার্বোনেট আর ভিটামিন ডি যদি বেশিমাত্রায় দেওয়া হয়, তাহলে মিল্ক-অ্যালকালি সিনড্রোম হতে পারে। এর থেকে রেনাল ফেলিওর হতে পারে। ওরাল সাপ্লিমেন্টেশনের ফলে হাইপারভিটামিনোসিস ডি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এর ফলে আবার হাইপাক্যালশিমিয়া এমনকি কিডনিতে পাথরও জমতে পারে।
কিন্তু রোদে দাঁড়িয়ে ভিটামিন সিন্থেসিস হলে সেটি কখনওই টক্সিক লেভেলে পৌঁছায় না। ফরসা লোকেদের মেলানিন পিগমেন্টেশন বেশি বলে খুব দ্রুত ভিটামিন ডি সিন্থেসিস হয়। অপেক্ষাকৃত শ্যামলাবর্ণের লোকদের রোদে থাকতে হয় আরও একটু বেশিক্ষণ। ৩০-৫০ ন্যানোগ্রাম হল ভিটামিন ডি-র আদর্শ পরিমাপ। কারও যদি এই মাত্রা ২০ এর নীচে হয় তাহলে তাকে সাপ্লিমেন্ট দিতে হয়।
সঠিক মাত্রা মেনটেন করতে রোজ ৮০০ ইউনিট সাপ্লিমেন্টেশনের প্রয়োজন হয়। ভিটামিন ডি-র মাত্রা শরীরে খুব কম হলে সাপ্লিমেন্টের ডোজও বাড়ানো হয়। ডাক্তারের পরামর্শে ৬৮ সপ্তাহ ধরে ১৬০০ ইউনিট প্রতি সপ্তাহ হিসেবে সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়।
তবে রোগীকে সমসময় মনিটর করতে হয় যাতে টক্সিসিটি না হয়। একবার ভিটামিন টক্সিসিটি হলেও পরের বছর আবার কিন্তু এর অভাব দেখা দিতে পারে। তাই, খরচসাপেক্ষ হলেও ভিটামিন ডি পরিমাপ করা খুব জরুরি। কারণ পরিমাপ না করে দিনের পর দিন ভিটামিন ডি খেতে থাকলে টক্সিসিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডাক্তারবাবু লক্ষণ দেখে যদি সন্দেহ করেন ও রোগী যদি প্রয়োজনীয় টেস্ট না করাতে পারেন, তাহলে ছ’ থেকে আট সপ্তাহ সাপ্লিমেন্টেশন দেওয়া হয়। এছাড়া কী কী কারণে ভিটামিন ডি-র অভাব হচ্ছে সেটি খুঁজে বের করে অনুরূপ চিকিৎসা করা হয়। লিভার বা কিডনির সমস্যায় ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। ওরাল ক্যাপসুল খেতে হয়।
ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
মোবাঃ ০১৭৩১৯৫৬০৩৩, ০১৫৫২৪৬৮৩৭৭, ০১৯১৯০০০০২২