অধিকাংশ দম্পতির কাছে বিধাতার সবচেয়ে বড় উপহার একটি সুস্থ্য শিশু। শুধু মা-বাবাই নন, একটি সুস্থ শিশু ভূমিষ্ট হলে পরিবারের সবাই যারপরনাই খুশি হন। যদি কোন ক্রটি নিয়ে শিশুর জন্ম হয় তবে তা যেকোন পরিবারে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি করে।
শিশুর জন্মগত ক্রটিগুলো প্রধানত দুই ধরনের হয়:
(১) যা দেখা মাত্রই বোঝা যায়, যেমন ঠোঁট কাটা, তালু কাটা, আঙুলের সংখ্যা কম বা বেশি, অঙ্গ-প্রতঙ্গের অস্বাভাবিক আকৃতি ইত্যাদি এবং
(২) যে-ক্রটি চোখে দেখে বোঝা যায় না, কেবল ডাক্তারী পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়। জন্মগত হৃদরোগ এমনি একধরনের ক্রটি যা চোখে দেখে বোঝা যায় না। অবশ্য কোনো শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্মেছে কি না এ বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যায়। একটু খেয়াল করলেই যেকোনো শিক্ষিত মা-বাবা বা আতœীয়-স্বজন তা আঁচ করতে পারেন। এ-বিষয়ে একটা সত্যি ঘটনা বলা যাক:
ক’দিন আগে এই রচনার প্রথম লেখকের কাছে চিকিৎসার জন্য এক মহিলা তাঁর গর্ভজাত ১০ মাসের একটা ছেলে নিয়ে এসেছিলেন। ছেলেটির নাম দিপু। তিনি শিশুটির মায়ের কাছে জানতে চাইলেন ওর সমস্যা গুলো কী কী। মহিলা বললেন:
”জন্মের পর থেকেই দেখছি আমার বাচ্চা ঠিকমত খেতে পারে না, বুকের দুধ খেতে গেলে হাপিয়ে উঠে; একটু জিরিয়ে নিয়ে আবার একটু খায়; বেশি-বেশি ঘামে; প্রায়ই সর্দি কাশি হয়, এমনকি নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ দেখা দেয়। এর সঙ্গে ওজনও বাড়ছে না; এখনো ভালো করে বাড়ছে না; এখনো ভালো করে বসতে পারে না; কেমন যেন হাই ফাই করে; অন্যান্য বাচ্চার মত প্রাণচঞ্চল নয়”।
এ পর্যন্ত বলে মহিলা একটু থামলেন। চিকিৎসক জিজ্ঞেস করলেন কান্নাকাটি করলে তাঁর বাচ্চার গায়ের রঙ নীল বা কালচে হয়ে যায় কি না? শিশুটির মা জানালেন ইদানীং তার সে রকমই মনে হয়। তিনি আরো বললেন জন্মের পর থেকে তিনি তার শিশুকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ছয় মাস পর্যন্ত শ্ধুু বুকের দুধ খাইয়েছেন, এখনো বুকের দুধ দিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় সবগুলো টিকাও দিয়েছেন। এসব কথা শুনে চিকিৎসক বুঝলেন এ পর্যন্ত মহিলা তার শিশুর জন্য যা যা করেছেন সবই ঠিক ঠিক করেছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাও খুবই ভালো। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর চিকিৎসকের মনে হলো দীপুর জন্মগত হৃদরোগ আছে। তিনি দীপুর একটা এক্্র-রে এবং ইকোকার্ডিওগ্রাম করালেন। ইকোর রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁর ধারণাই সত্যি হলো-অর্থাৎ দীপুর জন্মগত হৃদরোগ আছে।
জন্মগত হৃদরোগ কেন হয়
জন্মগত হৃদরোগ কেন হয় তার সবকিছু সম্পর্কে আমরা এখনো জানি না। তবে এটুকু জানা গেছে: জন্মগত হৃদরোগ বহু সমস্যার কারণে হতে পারে। গর্ভবতী অবস্থায় মা-র যদি জার্মান মিজিলস বা হাম হয় বা অন্য কোন ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ ঘটে তবে গর্ভজাত সন্তান হৃদরোগ নিয়ে জন্মাতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে কিছু ওষুধ খেলে শিশুর হৃৎপিন্ডে জন্মগত ক্রটি দেখা দিতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে বারবার এক্্র-রে করালে. মা-বাবার বংশগত কোনো হৃৎপিন্ডজনিত স্বাস্থ্যসমস্যা থাকলে, গর্ভাবস্থায় ধূমপান ও মদ্যপান করলে মা-র অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস (বহুমুত্র) থাকলে এরকম হতে পারে। তবে, অনেক সময় তেমন কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
প্রতিকার
যেকারণেই হোক, জন্মগত হৃদরোগ এখন আর তেমন ভয়ের কোনোকিছু নয় কারণ প্রায় সব ধরনের জন্মগত হৃদরোগের শৈল্য-চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হচ্ছে।
নবজাতকের জন্ম-ওজন কম হলে কী করবেন
একটি শিশু যে ওজন নিয়ে জন্ম নেয় তাকে তার জন্ম ওজন বলা হয়। একটি স্বাভাবিক শিশুর জন্ম-ওজন ২,৫০০ গ্রাম থেকে ৪,০০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। যে-শিশুর জন্ম-ওজন ২,৫০০ গ্রামের কম তাকে কম ওজন বিশিষ্ট শিশু বলে গন্য করা হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে: বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ২২ ভাগ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং তা নবজাতকের মৃত্যুর প্রধান কারণও বটে।
মায়ের সমস্যা এবং নবজাতকের নিজের সমস্যা-এই দুই কারণেই একটি শিশু কম ওজন নিয়ে জন্ম নিতে পারে।
মায়ের যেসব সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে নবজাতকের জন্ম-ওজন কম হতে পারে সেগুলো হলো:
কম বয়সে বিয়ে এবং গর্ভধারণ
বেশি বয়সে গর্ভধারণ
ঘনঘন সন্তান গ্রহণ
মায়ের অপুষ্টি
গর্ভাবস্থায় যোনিপথে রক্তপাত
সময়ের আগেই পানি ভেঙ্গে-যাওয়া কিংবা প্রসব ব্যথা শুরু হওয়া
ধুমপান কিংবা মাদকাসক্তি
মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম ও মানসিক চাপ
উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, কিডনির রোগ, হৃদরোগ, লিভারের রোগ সহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগ
শিশুর নিজের যেসব সমস্যার কারণে তার জন্ম-ওজন কম হতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
অপরিণত অবস্থায় (অর্থাৎ) ৩৭ সপ্তাহ গর্ভকালীন সময় পূর্ণ হওয়ার আগেই) জন্ম নেওয়া
জন্মগত ক্রটি
গর্ভে একাধিক শিশুর অবস্থান (যমজ শিশুর জন্ম)
জন্মগত কোনো সংক্রমণ
ডাঃ শাহজাদা সেলিম
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বারডেম হাসপাতাল, শাহবাগ, ঢাকা
ফোন ঃ ০১৯১৯০০০০২২, ০১৭৪৫৯৯৯৯৯০, ৯৬১৩৩৮৯-৯০