শিশুশ্রমিকের শহরে এক চক্কর : ফয়সাল আহমেদ

0
1084

 

সাতসকালে পথে নামলে বাসে, ব্যক্তিগত গাড়িতে স্কুলপোশাক পরা শিশুদের দেখা মেলে। তারা ছুটছে স্কুলের দিকে। কোনো একটা বাস স্টপেজে এলে বোঝা যায়, সকালবেলা ঢাকার কোন শিশু যায স্কুলে, আর কোন শিশু যায় কাজে। তাই বাস স্টপেজে দৈনিক পত্রিকা হাতে খুদে হকারদের হল্লা, ‘মামা পেপার লাগব, পেপার। গরম খবর, তাজা খবর, পেপার….।’ স্টপেজে বাসের ফাঁকফোকর গলে বেচা-বিক্রির জন্য ঘুরে বেড়ায় তারা।

ওরা যে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে, সেই কথা জানালেন মিরপুর-মতিঝিল রুটের বাসকর্মী মোহাম্মদ মানিক। তাঁর ভাষ্য, ‘পেপার বেচার লেইগা পোলাপাইন যেইভাবে চলন্ত বাসে ওঠে-নামে। ওরা যেকোনো সময় বাসের নিচে পড়তে পারে।’ সড়কের সিগন্যালে ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রি করে এমন শিশুও কম না শহরে। সবুজ বাতি জ্বলে উঠতেই সড়ক বিভাজক কিংবা ফুটপাতে পড়িমরি করে দৌড়াতে হয় তাদের। পথে শুধু শিশু হকার নয়, বাসকর্মীও চোখে পড়ে। র্ফামগেটে দেখা হয় বাসের কন্ডাক্টার আবিদের সঙ্গে। বয়স ১০ পার হয়নি। সে জানায়, ‘কাম না করলে আমাগো খাওন দিব কে?

নগরের প্রায় সব বাস রুটেই তার মতো বেশ কিছু শিশু কন্ডাক্টর কিংবা হেলপারের কাজ করছে। এত গেল পথের খবর। পথের পাশের দোকানপাট, কলকারখানায়ও কিন্তু কাজ করছে শিশুরা। পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোড ও করাতিটোলার লোহার যন্ত্রাংশ, ঢালাই ও ওয়েল্ডিং কারখানাগুলোয় কাজ করছে শিশুরা। শুধু ফুট-ফরমায়েশ খাটা নয়, ওয়েল্ডিং করা, লোহার যন্ত্রাংশ ও ঢালাই লোহা তৈরির ছাঁচ তৈরিতেও সক্রিয় তারা। টিপু সুলতান রোডের একটি ওয়েল্ডিং কারখানায় কাজ করে রাজু। তার পড়াশোনার পাট চুকে গেছে অনেক আগেই। এই শিশুকর্মী বলল, ‘টেকা পয়সার অভাবে কাজে নামতে হইছে। এই কামরে সবাই ভালা কয়। হাতের কাজরে দাম দেয়। এই কাজটা শিখতে পারলে না খাইয়াও মরতে লাগব না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কলকারখানায় প্রাথমিকভাবে হেলপার হিসেবেই যোগ দেয় শিশুরা। দু-এক বছরের মধ্যে তারা হয়ে ওঠে মোটামুটি দক্ষ শ্রমিক। এভাবেই লেদমেশিন, ঢালাই লোহার ছাঁচ ও ওয়েল্ডিং কারখানার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে যায় তারা।

শিশুশ্রমিকদের ঝুকি সম্পর্কে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষু রোগের চিকিৎসক আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, কলকারখার কাজে বড়দেরই অনেক ঝুঁকি থাকে। চোছাটদের বেলায় ঝুকি আরও বেশি। ওয়েল্ডিংয়ের সময় চোখে লোহার কণা গেলে দীর্ঘমেয়াদিভাবে চোখ থেকে পানি পড়তে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিয়োজিত করা উচিত নয়।

একটি রিপ্লাই দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.