বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর বেঁচে নেই। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁর মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে এলআরবি ব্যান্ড নিয়ে রংপুরে সংগীত পরিবেশন করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। সেখানে থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় ফেরেন তারা। কিন্তু আইয়ুব বাচ্চু অস্বস্তি বোধ করছিলেন। সকাল ৮টার দিকে বাসায় ব্রেইন স্ট্রোক করেন তিনি। তড়িঘড়ি তাকে স্কয়ার হাসপাতালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন এ গুণী শিল্পী। সংগীত জীবনের দীর্ঘ চার দশকে অসংখ্য গান তিনি উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। তার অনেক গান মানুষের আন্তরে গেঁথে আছে।
জনপ্রিয় ব্যান্ডশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর সংগীত জগতে যাত্রা হয় ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে। শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি নামেও পরিচিত তিনি। তাঁর ডাক নাম রবিন। মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্লাসিকাল সংগীত এবং লোকগীতি দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। ১৯৯১ সালে জন্ম নেওয়া ‘এলআরবি’ ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট ও ভোকাল তিনি। এর আগে তিনি প্রায় দশ বছর সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
তার উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’ ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’ ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ ‘অবাক হৃদয়’ ‘আমিও মানুষ’ ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘সুখ’, ‘মন চাইলে মন পাবে’সহ অসংখ্য গান।
নব্বইয়ের দশক থেকে ব্যান্ড সঙ্গীতের চর্চা শুরু করেন আইয়ুব বাচ্চু। তারপর থেকে এই গায়ক ও সংগীত পরিচালক গান আর গিটারের মূর্ছনায় শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন। গত ১৬ আগস্ট শেষ জন্মদিন পালন করেন তিনি।
আইয়ুব বাচ্চুর সফলতার শুরু তাঁর দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ (১৯৮৮) দিয়ে। এরপর ১৯৯১ সালে বাচ্চু ‘এলআরবি’ ব্যান্ড গঠন করেন। এই ব্যান্ডের সাথে তাঁর প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম ‘এলআরবি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তাঁর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ বের হয়। ‘সুখ’ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’ পুরো দেশে আলোড়ন তৈরি করে। এর মধ্যে ‘চলো বদলে যাই’ গানটি বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’। একই বছর তাঁর চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ‘ঘুমন্ত শহরে’ প্রকাশিত হয়। সেটিও সাফল্য পায়। আইয়ুব বাচ্চুর সর্বশেষ তথা ১০ম অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’ প্রকাশ হয় ২০১৫ সালে।
আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া কিছু গান এখনো সমানভাবে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘সেই তুমি কেন এতো অচেনা হলে’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘এক আকাশের তারা তুই’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’ উল্লেখযোগ্য। শুধু অডিও গানে নয়, প্লেব্যাকেও তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তাঁর গাওয়া প্রথম প্লেব্যাক ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় গান। এছাড়া ‘আম্মাজান’ ছবির শিরোনাম গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।