টোনা টুনির পাঠশালা ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু : মোদাচ্ছের হোসেন

0
845

টোনা টুনির পাঠশালা ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু
মোদাচ্ছের হোসেন

প্রতিদিনের চেয়ে আজকের দিনটি একটু ব্যতিক্রম। ‘আলো ঝলমলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বিশেষ দিন’ এটার জন্যই দিনটি ব্যতিক্রম এমনটি নয়। প্রতিটি দিনই বিভিন্ন কারণে প্রাকৃতিক বৈচিত্ররূপে সৌন্দর্যমণ্ডিত থাকে। আজকের দিনটি আমার কাছে ব্যতিক্রম এই কারণে যে আজ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে বেশকিছু সময় কাটিয়ে মনে হয়েছে দীর্ঘ সময় পরে একটি সুন্দর সময় অতিবাহিত করলাম। বোধকরি যৌবণে এসে স্বপ্নময় ছেলেবেলাকে হারিয়ে সবসময় খুঁজে ফিরি সেই স্বপ্নময় দিনে শিশুদের সাথে পরম সুখে কাটিয়েছি কিছুটা সময়। ভুলে গিয়েছি সকল যান্ত্রিকতা। যান্ত্রিক জীবনে সবাই সুখের পেছনে ছুটে, ভোগে সুখ খুঁজে কিন্তু কেউ ভাবে না যান্ত্রিকতা ও ভোগে সুখ নেই, সুখ আছে কোমলতায়, ভালোবাসায়।
রাতের আধারের চাইতেও ভয়ঙ্কর আঁধার হলো অশিক্ষা ও কুশিক্ষার আধার। আলো জ্বেলে প্রাকৃতিক আধার দূর করা যায় অথবা ভোরের সুর্য ওঠার সাথে সাথে ঐ আধার কেটে সর্বত্র আলো ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু সমাজের প্রকৃত আঁধার দূর করতে হলে প্রয়োজন সু-শিক্ষার আলো। শিক্ষার আলো ব্যতিত মানবমুক্তি সম্ভব নয়। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা যেখানে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে অনেক দূরে সেখানে শিক্ষার আলো জ্বালা অত্যন্ত দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার। এমন একটি দুঃসাধ্য কাজই সফলতার সাথে করে যাচ্ছেন একদল তরুণ-তরুণী। তারা হিউম্যান এইড বাংলাদেশ নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেন ২০১০ সালের ২৫ মে। তাদের শ্লোগানটি অত্যন্ত মানবতাবাদী ‘‘মানবতার কল্যাণে একতা”। প্রকৃত অর্থেই মানবতার মুক্তির জন্য একতার কোন বিকল্প নেই। এই মহতি উদ্যোগের জন্য তাদেরকে শুধু ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করা সমিচীন হবে না।
‘টোনা টুনির পাঠশালা’ ঐ সকল উদ্যমী তরুণ-তরুণীদের ভাবনারই একটি ফসল। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য কল্যাণপুর বস্তিতে হিউম্যান এইড বাংলাদেশের পরিচালনায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘টোনাটুনির পাঠশালা’। সেখানে প্রায় শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশু শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে। ঐ সকল শিশুদের বেশিরভাগই থাকে ঐ বস্তিতে এবং আশ-পাশের রাস্তায়। হিউম্যান এইড বাংলাদেশের তিনজন সদস্যসহ আমরা বস্তির গলিপথ পেরিয়ে শেষ মাথায় গিয়ে ঝিলের পাড়ে ‘টোনা টুনির পাঠশালায়’ গিয়ে পৌঁছাই। আমরা পাঠকক্ষে প্রবেশ করতেই সকল ছাত্রছাত্রীরা উঠে আমাদেরকে স্বাগতম জানালো। সহজ-সরল কঁচিমুখগুলো দেখে নিমিষেই প্রাণে কেমন সুখের দোলা লেগে গেলো তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। শুরু হলো তাদের সাথে আমাদের আলাপ আলোচনা ও বন্ধুত্ব। ক্লাশ শিক্ষিকারাও অত্যন্ত অমায়িক। মোট তিনটি পাঠকক্ষেই আমরা পর্যায়ক্রমে শিশুদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলি। শিশুগুলো এতো বিনয়ী ও মেধাবী তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। তাদেরকে যদি শিক্ষার পরিপূর্ণ সুযোগ দেয়া হয় তবে তারাও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সকলের সাথে মিলেমিশে সমান তালে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করার অবকাশ নেই। এতো ভালো লাগার মাঝেও কষ্টের বিষয় হলো- ঐ শিশুগুলোর সবার হাতে শিক্ষার উপকরণ বই-খাতা-কলম নেই। সরকারী বইগুলোও দুইতৃতীয়াংশ শিশুদের হাতে নেই। কেননা সরকারী বইগুলো ‘টোনাটুনির পাঠশালা’ পায় না। যা আছে তা তারা বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করেছে। তিন-চারজন শিশু মিলে একটি বই ভাগাভাগি করে পড়ে। কর্তৃপক্ষের সুনজর পড়লে হয়তো তাদের এই পাঠ্যবইয়ের সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।
কচি পাতা সাধ্যমতো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে থেকে তাদেরকে আলোর পথে নিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। কেননা কচি পাতা’র শ্লোগানই হলো- ‘সব শিশুকে নিয়ে যাবো এগিয়ে’।

একটি রিপ্লাই দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.